সন্দেহ প্রবণতা থেকে স্কুলশিক্ষক স্বামীকে খুন!

Looks like you've blocked notifications!
নেত্রকোনা সদর উপজেলায় গত ২৭ জানুয়ারি এভাবে শিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরীর লাশ পড়ে ছিল। ছবি : এনটিভি

নেত্রকোনা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে হত্যার শিকার স্কুলশিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরী হত্যারহস্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উদঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ। স্কুলশিক্ষক স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী মনি বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।

নিহত স্কুলশিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরী জেলার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত সোমবার সকালে সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নে রুই কোনাপাড়ায় মগড়া নদীর তীরের জঙ্গলে গ্রামের লোকজন এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশটি স্কুলশিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরীর বলে শনাক্ত করে পরিবারের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে আকবর আলী মুন্সী জানান, উজ্জ্বল নয় বছর আগে সদর উপজেলার সিংহের বাংলা উইনিয়নের রুই কোনাপাড়ার আবদুল হাইয়ের মেয়ে মণি বেগমকে বিয়ে করেন। মৃত্যুর ১৫ দিন আগে থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

এদিকে নিহত উজ্জ্বলের স্ত্রী মণি বেগম জানান, তাঁর স্বামী গত রোববার সন্ধ্যায় চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।

ঘটনার পর খুনের রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশ। দাম্পত্য জীবনে উভয়ের মধ্যে বিরাজমান সন্দেহ প্রবণতা থেকে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার রেশ ধরে মনি বেগম দুই সন্তানসহ বাবার বাড়িতে চলে আসেন। মাঝেমধ্যেই স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে দেখা করার জন্য শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন উজ্জ্বল চৌধুরী।

ঘটনার ১৫ দিন আগে লম্বা ছুটি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন উজ্জ্বল চৌধুরী। দেনা পরিশোধের জন্য শ্বশুরের কাছে টাকা চাওয়ায় ঝগড়া হয় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। এরপর অভিমান করে বের হয়ে যান উজ্জ্বল। রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। এরপর অনেক অনুসন্ধানের পর পুলিশ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়।

পুলিশ জানায়, পারিবারিক, মানসিক ও সন্দেহ প্রবণতার কারণে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মনি বেগম। সেই অনুযায়ী সন্ধ্যার পর চাচাতো ভাই জয়কে নিয়ে কোমল পানীর সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে উজ্জ্বল চৌধুরীর হাত, পা, মুখ মাফলার দিয়ে বেঁধে চাদর প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং গ্রামের জঙ্গলের পাশে ফেলে রাখেন।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া মনি বেগম ও ভাই জয় শিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরী হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল, নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম, নেত্রকোনা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ নূর এ আলম।