সময়ে সময়ে ‘আলট্রা লেফট, আলট্রা রাইট’ এক হয়ে যায় : প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা মতাদর্শের মেরুকরণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে অদ্ভূত একটি মিথস্ক্রিয়া দেখা যায়। সময়ে সময়ে আলট্রা লেফট (অতি বামপন্থি) ও আলট্রা রাইট (অতি ডানপন্থি) এক হয়ে যায়।’

এ সময় সরকারপ্রধান কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো রাজনীতিবিদের নাম উল্লেখ না করে আরও বলেন, ‘আমরা বিশৃঙ্খল ও বিধস্ত একটি দেশকে বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এটি ধরে রাখতে হবে। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা চায়নি, যারা দেশটাকে দুর্নীতির একটি আখড়ায় পরিণত করেছিল। তারা আমাদের উন্নয়নকে মেনে নিতে পারেনি।’

আজ শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। আর গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ উপলক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকারপ্রধান। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক রাজা সম্প্রতি প্রচারিত ও আলোচিত আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরার তথ্যচিত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। সেই বক্তব্যের জবাবেই একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আলট্রা লেফট, আলট্রা রাইট’ মিথস্ক্রিয়ার প্রসঙ্গটি আনেন।

তবে এ ধরনের প্রতিবেদন (আল জারিরার) নিয়ে দেশবাসীর চিন্তার কিছু নেই- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা দেশের মানুষই বিচার করে দেখবে। এ প্রতিবেদনের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা। আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’ জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী যারা একটি দেশের রাষ্ট্রপতিকেই শুধু নয়, শিশু ও নারীসহ একটি পরিবারকে হত্যা করেছে। এ হত্যাকারীদের আবার দূতাবাসে চাকরিও দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সন্তান হিসেবে আমার পিতা-মাতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধী, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরও বিচার আমি করেছি। সেই সঙ্গে দুর্নীতি, লুটপাট, অস্ত্র চোরাচালান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারও আমি করেছি। তারা তো এখন কেউ বসে নেই। তাদের কিছু ইন্ধন আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সন্তান হিসেবে আমার মা-বাবাসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। তাদের উত্তরসূরীরা এখন দেশে- বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারাই উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই সুখবর দিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সরকারপ্রধান। স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাপিছু আয় যেখানে হতে হয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার—সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন আর বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫ দশমিক ৩।

জাতিসংঘের আইন অনুসারে, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির সভা থেকে তা ঘোষণা করা হয়। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তায় ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি-পর্ব চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে চলেছে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি।