সরকারি তথ্যের চেয়ে বড়পুকুরিয়ায় চারগুণ বেশি কয়লা চুরি : ক্যাব
সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে আসা তথ্যের চেয়ে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে প্রায় চারগুণ বেশি কয়লা চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
ক্যাবের হিসাবে, বড়পুকুরিয়া থেকে পাঁচ লাখ ৪৮ হাজার টন কয়লা চুরি হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৭০০ কোটি টাকা। আর এই আত্মসাতের সঙ্গে খনি কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি পরিচালনা বোর্ড, শেয়ার হোল্ডার, পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগেরও দায় আছে বলে মনে করে ক্যাব।
গেল বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা চুরির কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। যা তোলপাড় ফেলে সরকারের শীর্ষ মহলেও। সে সময় জ্বালানি মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা চুরি হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয় ২৩০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় স্বাধীন কমিশন গঠনের পর তদন্ত করে ক্যাব।
যার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় আজ। সেখানে উঠে আসে, কয়লায় পানির পরিমাণ নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি দেখিয়ে চুরি করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৮ হাজার টন কয়লা। যা সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুরি হওয়া কয়লার চেয়েও প্রায় চারগুণ বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘কমিশনের হিসেবে এ ঘাটতি ১০৭.৪৬ বিয়োগ ১০০.২২; অর্থাৎ, ৭.০৯ লাখ টন। পেট্রোবাংলার প্রস্তাব মতে, কয়লা সরবরাহতে সিস্টেম লস গড়ে ১.৫, অর্থাৎ ১.৬১ লাখ টন ধরে নিলেও কয়লার ঘাটতি বা আত্মসাৎ ৭.০৯ বিয়োগ ১.৬১, অর্থাৎ ৫.৪৮ লাখ টন।’
ওই ঘটনায় সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। যার বাদী খনি কর্তৃপক্ষেরই এক কর্মকর্তা। তবে ক্যাবের মতে, এর দায় আরো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘দুদকের অভিযোগপত্রে বর্ণিত অভিযোগমতে, কয়লা সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) সাতজন এমডিসহ ২৩ জন কর্মকর্তা অভিযুক্ত। তবে কমিশনের মতে, কেবল ওই ২৩ জনই নন, পরিচালনা বোর্ডের সদস্য, বিসিএমসিএলের শেয়ার হোল্ডার এবং পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি বিভাগ ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বের অবহেলার কারণে কয়লা আত্মসাতের ঘটনাসহ আলোচ্য অপরাধমূলক কার্যক্রম ঘটেছে।’
এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য সরকারি মালিকানাধীন সব কোম্পানির পরিচালন নীতি ও আইনি কাঠামো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ১৩ দফা সুপারিশও করেছে ক্যাব।