সরকার দেশেকে দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ করে ফেলেছে : মির্জা ফখরুল

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি : সংগৃহীত

সরকার বাংলাদেশেকে ‘দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ’ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে আজ শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ‘ব্যক্তি খাত বিকাশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মুক্তবাজার অর্থনীতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার, আজকে শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানিলন্ডারিং এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এখন সরকার নিজেই বলছে; এটা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার, দুদক চেষ্টা করছে। দুর্ভাগ্য আমাদের, এই কয়েকদিন আগে দেখলাম, দুদকের যিনি প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন তার নামেও দুর্নীতির অভিযোগ চলে এসেছে।’

বিএনপির  মহাসচিব বলেন, ‘গোটা দেশ এখন দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আওয়ামী লীগের সরকার আজকে সেটা তৈরি করেছে। সেই ১৯৭৫ সালে যে উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশকে একটা নতজানু দেশ হিসেবে পরিণত করবে; পরনির্ভরশীল অর্থনীতি হিসেবে তৈরি করবে; সেই উদ্দেশ্যে তারা (সরকার) কাজ করে যাচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সরকার কী করেছে? একটা মিথ তৈরি করতে চায়। মিথটা কী? সাউথ ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটা রোল মডেল মধ্য আয়ের দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। এটা ভাওতা। তারা গোয়েবেলসীয় পদ্ধতিতে  প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে আজকে সেই কথাটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।’

‘কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা কী? বাস্তব অবস্থাটা হচ্ছে, এখন এ দেশে প্রায় ছয় কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে। বাস্তব অবস্থাটা কী? আজকে করোনার যে আঘাত আসছে, সেই আঘাত সহ্য করতে পারছে না বাংলাদেশ। অর্থনীতি সহ্য করতে পারছে না। আজকে আরও দুই কোটি লোক নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। একদিকে কিছু লোক তারা লুটের ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।’

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা তুলে ধরে সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭২ সালে পশ্চিমা উন্নত বিশ্ব বলুন, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলুন, তারা মনে করত যে, এটা ফেইল স্টেট হয়ে যাবে, এখান থেকে বাঁচানোর কোনো পথ নেই। সেখান থেকে জিয়াউর রহমান সেটাকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন উপরে; একটা পটেনশিয়াল ইকোনমির দেশ হিসেবে, একটা সম্ভাবনাময় জাতি নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তার মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা ছিল না, তার মধ্যে কোনো কুপমণ্ডুকতা ছিল না। একজন আধুনিক মানুষ আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।

বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আজকে আমাদেরকে জিয়াউর রহমান পথ অনুসরণ করে প্রথমে আমাদের দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিতে হবে এবং সব গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একীভূত করে সেই গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে আনতে হবে যে গণতন্ত্র আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ আছেন, তাঁকে মুক্ত করতে হবে। এ দেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে হবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চিন্তাভাবনা থেকে।’

মির্জা ফকরুল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর হয়ে গেল। এই ৫০ বছরে এখন পর্যন্ত আমাদের বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছে, জোর করে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, আওয়ামী লীগ সরকার তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের যে জাতি নির্মিত হচ্ছিল সেই জাতি নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়াটাকে তারা ব্যাহত করেছে এবং তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটা পরনির্ভরশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে চাচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সেই একজন ব্যক্তি, একটা পরিবার এবং একটা দলকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আজকে যেভাবে সমগ্র দেশকে গ্রাস করে ফেলা হচ্ছে। তখনও (১৯৭২-৭৫ সাল) ঠিক সেইভাবে গ্রাস করে ফেলা হয়েছিল। মানুষজন চোখের সামনে দেখল যে, তারা সুপরিকল্পিতভাবে লুটপাটের মধ্য দিয়ে দেশটাকে একটা ভাগাড়ে পরিণত করেছিল। এই কথাগুলো বললে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না। অত্যন্ত বড় নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই সময়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামটা পরিবর্তন করে তাকে নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি নাম দেওয়া উচিত। কারণ তারা এই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছিল।’

ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জাতীয় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান বক্তব্য দেন।