সরকার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে : মির্জা ফখরুল

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

সরকার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তারা (সরকার) সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাস্প, সাম্প্রদায়িকতার বীজ এখানে বপন করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে যে সম্প্রদায়িকতার উত্থান হয়েছে তাকে নিয়ে এসে তারা বাংলাদেশে ঢুকিয়েছে।

দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বুধবার শুভ বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

বিএনপির উদ্যোগে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানের চট্টগ্রামের ফতেনগর দক্ষিণ সুনীতি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুমঙ্গল থের মহামতি বুদ্ধের বাণী পড়ে শুনান এবং প্রার্থনা করেন।

অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এই পবিত্র দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে ঢুকিয়েছে বলেই আজকে কিন্তু এখানে ২৬ মার্চের যে ঘটনা, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকে সারা দেশের মানুষকে একটা অস্থির অবস্থায় নিয়ে ফেলেছে। গ্রেপ্তার করছে, গুম করছে এবং নির্যাতন শুরু করেছে। গোটা দেশে সাম্প্রদায়িকতার আজকে যা কিছু হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে তার জন্য দায়ী হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার এবং তারা যেটা জেনে শুনে করছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে গণতন্ত্র নিহত হচ্ছে, গণতন্ত্র আজকে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, গণতন্ত্র আজকে হেরে যাচ্ছে, পরাজিত হচ্ছে ধর্মান্ধতার মধ্যে, পরাজিত হচ্ছে কর্তৃত্ববাদের কাছে, পরাজিত হচ্ছে ফ্যাসিবাদের কাছে। ক্ষমতায় যারা থাকছেন তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্যে মানুষকে হত্যা করছেন, মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, নির্যাতন করছেন। এটা প্রায় সমগ্র পৃথিবী জুড়েই চলছে। আমরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়ে দাঁড়িয়েছি এই সময়ে। আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী আপনারা ভালো করে যদি গৌতম বুদ্ধের যে নির্দেশাবলী দেখেন, দেখবেন দেশে আজকে যা হচ্ছে তা অশান্তি, অন্যায়। পৃথিবী পাপ আর পঙ্কিলতায় ভরে গেছে। আমাদের একদিকে করোনা, আরেক দিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের দুর্নীতি, নিপীড়ন-নির্যাতন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে অবশ্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মুক্ত পরিবেশে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আজকে মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার। গুম-খুন, হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে মিথ্যা মামলায় মানুষকে যেভাবে জর্জরিত করেছে এবং যারা ভিন্নমতের সাংবাদিক রয়েছেন তাদের থেকে শুরু করে বিশেষ করে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন করে চলেছে। ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে উৎসবের কোনো আমেজ নেই। এ্রখানে অনেকে বলেছেন, এই জালেম সরকারের থেকে দেশকে যদি আমরা মুক্ত করতে না পারি, আমাদের যৌক্তিক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্বাধীনতা আর কিছুই অবশিষ্ট রাখবে না। যেভাবে আজকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নির্যাতন ঘটে চলছে, রামু থেকে শুরু করে আজ অবধি কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয় নাই, কোনো আসামিকে বিচারের আওতায় আনা হয় নাই, একটি মামলারও নিষ্পত্তি হয় নাই। কারণ বাংলাদেশে যে অপশাসন চলছে, এক ব্যক্তির চোখের ইশারা ছাড়া কোনো ঘটনার বিচার আমরা আজ পর্যন্ত দেখতে পারছি না।

বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে সুভাষ চন্দ্র চাকমার সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, অমলেন্দু দাশ অপু, জন গোমেজ, মনিষ দেওয়ান, সুশীল বড়ুয়া, সনত তালুকদার, অধ্যাপক জয়ন্ত বড়ুয়া, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।