সর্বশক্তি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি :মির্জা ফখরুল
দেশে চলমান মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, সর্বশক্তি নিয়ে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি, জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকব, ইনশা আল্লাহ। নিজেদের ভয়ংকর ও মারাত্মক ভুলগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির সমালোচনায় ব্যস্ত সরকার।
ইতোমধ্যে সারা দেশে কমপক্ষে পাঁচ লাখ পরিবারের কাছে বিএনপি দেওয়া সাহায্য পৌঁছেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন,করোনাভাইরাসে এখন ভয়াবহ অদৃশ্য দানবের মতো গোটা পৃথিবীকে তছনছ করে দিয়েছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নানামুখি মূল্যায়ন ও করণীয় তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, তথ্যমন্ত্রী সাহেব কোনো তথ্য দিতে পারেন না। তিনি বারবার বলে যাচ্ছেন, এমনকি আওয়ামী লীগের লোকেরাও বলছেন যে, আমরা (বিএনপি) কিছু কাজ না করেই শুধু কথাই বলছি। এটা একেবারে সত্য নয়। আমাদের দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসনের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপদে রেখে বিপর্যস্ত মানুষের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলায় আমাদের দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমরা তো একেবারে বিরোধী দল। আমাদের যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, উপজেলা থেকে শুরু করে একেবারে উপরে পর্যন্ত, তাদের সবার ব্যবসা-বাণিজ্য কিন্তু নেই বললেই চলে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করা হয়। যারা দোকান করেন তাদের দোকান নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেও আমরা দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা (সরকার) এই কথাগুলো (বিএনপির প্রতি অভিযোগ) বলে শুধু তাদের যে ভয়ংকর ভুলগুলো হচ্ছে, মারাত্মক ভুলগুলো হচ্ছে সেগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ৪ এপ্রিল বিএনপির পক্ষে করোনাজনিত প্রভাব মোকাবিলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্যাকেজ জিডিপির ৩ শতাংশ ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) প্রস্তাবিত প্যাকেজের ভেতরে না গিয়েই কটু ভাষায় আমাকে বিশেষ করে বিএনপিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। এবং প্যাকেজটিকে কল্পনাবিলাস বলে প্রত্যাখ্যান করেন। অথচ পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ও সর্বমোট ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ প্রমাণ করে বিএনপি ঘোষিত প্যাকেজই ছিল বাস্তবভিত্তিক, একটি সুচিন্তিত ও সময় উপযোগী প্রস্তাবনা।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, বিরোধী দলের কাছ থেকে একটা প্রস্তাব আসছে সেটার ওপর ভিত্তি করে ডিবেট হতে পারতো, আলোচনা হতে পারতো। আমরা বলি না যে আমাদেরটাই চূড়ান্ত করতে হবে। কিন্তু একটা সুপ্রস্তাব নিয়ে কথা বলতে পারতেন তারা। তারা সেটা করেনি।’
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজকে ‘শুভংকরের প্যাকেজ’ বলেও এ সময় মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরু থেকেই দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছিল বিএনপির পক্ষ থেকে এবং বলা হচ্ছিল, সরকারকেই উদ্যোগী হয়ে এই ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে- এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিষয়টা হচ্ছে, একটা রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি সরকার। সরকারের যদি জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে তবে কোনো দায়দায়িত্বও থাকে না। একেবারে অ্যাকাউন্টিবিলিটি, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, কমিটমেন্ট এটা থাকে না। যার ফলে সরকার উপলব্ধিই করছে না, এখন যেটা হচ্ছে যে, সবাইকে একখানে আনা এবং একটা ধারণা সৃষ্টি করা- আমরা যা কিছু করছি ঐক্যবদ্ধভাবে করছি।’
এ সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের দিকে দেখুন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য রাজ্যগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলছেন। কথা বলেই কিন্তু তিনি কাজ করছেন। তিনি হয়তো বা তাঁর কাজটাই করছেন, কিন্তু আলাপ-আলোচনাটা তিনি করে নিচ্ছেন সবার সঙ্গে। এ রকমই প্রয়োজন।’
সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি তো একটা সবচেয়ে বড় দল। সেই বড় দলকে আপনি একেবারেই বাদ দিয়ে একেবারে নিজের মতো কাজ করছেন-করেন, কিন্তু ফলো তো করছেন আমাদেরকে। আমরা যা যা করছি সে কাজগুলোই তো করছেন। সেটা সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে করলেই তো হয়। আমরা বারবার করে বলছি, দেশের দুস্থ মানুষগুলোকে বাঁচানোই এখন বড় কাজ।’