সাংবাদিক রোজিনার জামিন বিষয়ে আদেশ আজ

Looks like you've blocked notifications!
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের শুনানির জন্য গত বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়। ফাইল ছবি

দণ্ডবিধি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন বিষয়ে আজ রোববার আদেশ দেবেন আদালত।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর আদালত দীর্ঘ শুনানির পর আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। পরে ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে রোববার আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান আদালত।

এ বিষয়ে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) নিজামুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘রোজিনা ইসলাম যে সচিবালয়ে আটক থাকা অবস্থায় মুচলেকা দিতে চেয়েছিলেন, যার ভিডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে, সেই ভিডিও ফুটেজ জমা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়েছে। এ জন্য আদালত আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন।’

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে জামিন শুনানি শুরু হয়ে দুপুর ২টার দিকে শুনানি শেষ হয়। সাংবাদিক রোজিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার, আশরাফ উল আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন হেমায়েত উদ্দিন হিরণ।

আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘এই মামলার ৩৭৯ ধারাকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে ৩৭৯ ধারার উপাদান হচ্ছে- যেকোনো বিষয়বস্তু চুরি করার ক্ষেত্র প্রকাশ্য স্থানে, উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আর প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ অনুযায়ী যদি বিশ্বাস করেন, তবে কথিত মতে ঘটনাস্থলটি হচ্ছে সচিবালয়। সুতরাং পরস্পর বিরোধপূর্ণ দুটি ধারা বিজ্ঞ আদালতের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করে যে, প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলটি কোথায়? আদৌ এই ঘটনা ঘটেছিল কি না?’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তাঁর মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আজ পরিস্থিতির শিকার।’

আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘সেকশন ৩-এর কোনো ইনগ্রিডিয়েন্টস নেই। অন্য যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা আইন অনুযায়ী জামিনযোগ্য। এ ক্ষেত্রে জামিন পাওয়াটা আমার অধিকার। আদালত জামিনের বিষয়টি অনিষ্পন্ন রেখে মৌখিকভাবে বলেছেন, পরে এ নিয়ে শুনানি হবে।’

এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধান না মেনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলা করা হয়েছে। তাঁর কাছে কী নথি পাওয়া গেছে এজাহারে তার উল্লেখ নেই। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনি। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা তাঁকে (রোজিনা ইসলাম) সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন।’

রোজিনার অপর আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার শুনানিতে বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে দুটি ধারায় মামলা করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক। কেননা কোনো সাংবাদিক যদি গোপন তথ্য সংগ্রহের কারণে অফিসের সিক্রেসির আশঙ্কা থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দিতে পারেন। একইভাবে সাংবাদিককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি বরং পেনাল কোর্টে ৩৭৯ ধারায় চুরির অভিযোগে যে ধারা দেওয়া হয়েছে তা অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা আসামির জামিন প্রার্থনা করছি। মামলার যিনি বাদি তিনি একজন উপসচিব মর্যাদার। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনাস্থলে ছিলেন এ ধরনের কেউ মামলায় বাদি ছিল না।  চুরির মামলা দিয়ে আসামির সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। কিছু অসৎ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিউজ করায় আসামিকে জেলে যেতে হয়েছে। আমরা আসামির জামিন মঞ্জুর করার প্রার্থনা করছি।’

এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রোজিনা ইসলামকে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে বৃহস্পতিবার (২০ মে) জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা হস্তান্তরের জন্য কাগজ পেয়েছি। ডিবিতে হস্তান্তরও করা হয়েছে এরই মধ্যে। মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়ন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিম।’

গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে ৯টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।

গভীর রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয় নথি চুরির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং ওই নথি দ্বারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার রাত থেকে সাংবাদিকেরা থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। নানা নাটকীয়তার পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। একইসঙ্গে রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। ওই দিন শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করেন এবং রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে রোজিনা ইসলামকে আটকের ঘটনার পর থেকে সারা দেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন সাংবাদিকেরা। এ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সাংবাদিক শাহবাগ থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে আবেদন করেন। তাঁদের দাবি, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হোক। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শনিবারও সারা দেশে মানববন্ধন করেছে সাংবাদিক সমাজ।