সাইক্লোন, হারিকেন, টাইফুন কী এবং কীভাবে সৃষ্টি হয়?

Looks like you've blocked notifications!

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘সাইক্লোন’ (ঘূর্ণিঝড়) ‘বুলবুল’-এর কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া কার্যালয়।

‘হারিকেন’, ‘টাইফুন’ ও ‘সাইক্লোন’— সবই ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে এগুলো ভিন্ন নামে পরিচিত। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘সাইক্লোন’। আর  উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘হারিকেন’। কিন্তু একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হলে তার নাম হয়ে যায় ‘টাইফুন’।

ঝড় কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

আবহাওয়াবিদদের কাছে ঘূর্ণিঝড়ের সাধারণ নাম ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোন’ বা উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলবিষয়ক প্রশাসনের (এনওএএ) ব্যাখ্যা অনুযায়ী, উষ্ণমণ্ডল বা উপ-উষ্ণমণ্ডল অঞ্চলের জলাধার থেকে যখন মেঘ ও বজ্রপাতসহ ঝড় সৃষ্টি হয়ে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় এগোতে থাকে, তখন তাকে উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বলে।

এ ছাড়া এনওএএর তথ্য অনুযায়ী, ‘যখন কোনো উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের তীব্রতা ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হয়, তখন তাকে উৎপত্তিস্থল অনুযায়ী ‘হারিকেন’, ‘টাইফুন’ বা ‘সাইক্লোন’ বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী হারিকেনকে ১ থেকে ৫ নম্বর ক্যাটাগরিতে (মাত্রা) ফেলা হয়।

কখন হয় এসব ঘূর্ণিঝড়?

আটলান্টিক মহাসাগরে ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হলো হারিকেন মৌসুম। এই অঞ্চলে এ সময়কালের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে ‘টাইফুন’ সৃষ্টি হতে পারে বছরের যেকোনো সময়। তবে সাধারণত উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে ‘টাইফুন’ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। আর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নভেম্বর থেকে এপ্রিল হলো ‘সাইক্লোন’ মৌসুম।

কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়?

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামের একটি তালিকা প্রস্তুত করে জাতিসংঘের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএমও।

ডব্লিউএমওর কাছে ‘হারিকেন’, ‘টাইফুন’ ও ‘সাইক্লোন’-এর সম্ভাব্য নামের তালিকা পাঠায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলো।

যেমন, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরীয় অঞ্চলের আটটি দেশ ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে ডব্লিউএমওর কাছে ‘সাইক্লোন’-এর সম্ভাব্য নামের তালিকা পাঠিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশ নাম এরই মধ্যে ব্যবহার করা হয়ে গেছে।

কীভাবে এসব ঝড় সৃষ্টি হয় : বিজ্ঞান কী বলে

সাগরের উষ্ণ পানির সংস্পর্শে এলে বাতাস দ্রুত ওপরে উঠতে থাকে। এরপর ওই বাতাস ওপরে উঠে ঠাণ্ডা হলে নিচ থেকে আরো উষ্ণ বাতাস এসে সেটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।

এভাবে বাড়তে থাকে বাতাসের তীব্রতা। উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড়ের প্রভাবে সাগরে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড ঢেউ। এই ঢেউ ভূমিতে আছড়ে পড়লে নগর ও শহরের বিশাল এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় বন্যা।

ভূমিতে তীব্র ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বিনষ্ট হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাসাগরের পানি ক্রমেই উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। যার ফলে ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতাও বাড়তে পারে।

বিজ্ঞানীরা আরো জানাচ্ছেন, উষ্ণতর বায়ুমণ্ডলে অধিক পরিমাণ পানি ধরে রাখতে পারে। এর ফলে উপদ্রুত অঞ্চলে অধিক পানিসহ ঘূর্ণিঝড়ের আছড়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই জটিলতর হচ্ছে বিভিন্ন নিয়ামকের কারণে।