সাকিবের অন্ধভক্ত মহসিন ‘ক্ষোভ থেকে হত্যার হুমকি’ দিয়েছেন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে মহসিন তালুকদার (২৫) তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ‘ক্ষোভ থেকে হত্যার হুমকি’ দিয়েছেন বলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে মহসিনকে গ্রেপ্তারের পর বিকেলে র্যাব-৯-এর সিলেট কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সাকিবের একজন অন্ধভক্ত মহসিন তালুকদার। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাকিবের পূজা উদ্বোধনে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এমন আচরণ করেন।
র্যাব-৯-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহসিন তালুকদার বলেছেন, তিনি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের অন্ধভক্ত। সম্প্রতি সাকিবের ভারতের কালীপূজায় উপস্থিত হওয়ার খবর মিডিয়ায় ভাইরাল হলে মহসিন বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সাকিবকে হত্যার হুমকিসহ নানা মন্তব্য করেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এ রকম ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটানো এবং দেশবাসীর কাছে সাকিবকে ক্ষমা চাওয়ানোর জন্য মহসিন এই কাজ করেন।
র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘কারো প্ররোচনায় নয়, তিনি নিজের ক্ষোভ থেকেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, এ ঘটনার পেছনে কারো ইন্ধন পাওয়া যায়নি।’
এর আগে আজ সকালে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের রনশি গ্রাম থেকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেখানে স্ত্রীর বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে মহসিন আত্মগোপন করেছিলেন বলে জানায় র্যাব। পরে তাঁকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়।
যেভাবে গ্রেপ্তার হন
এ বিষয়ে র্যাব-৯-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, মহসিন সুনামগঞ্জে লুকিয়ে আছেন, এই খবর পেয়ে সোমবার রাতেই তিনটি দল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে। সুনামগঞ্জে থাকা তাঁর বিভিন্ন আত্মীয় ও পরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। সিলেট থেকে তাঁর স্ত্রী ও ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে সুনামগঞ্জে আনা হয়। স্ত্রীও মহসিনকে ধরতে সহায়তা করেন। মঙ্গলবার সকালে একপর্যায়ে স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন মহসিন। ওই ফোনের সূত্র ধরেই তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় র্যাব। পরে রনসি গ্রামের ওই বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মহসিনকে সিলেট র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মহসিন তালুকদার সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের তালুকদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। র্যাব জানিয়েছে, মহসিন গতকাল সোমবার রাতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের রনসী গ্রামে তাঁর ভায়রার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এর আগে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) এ বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ফেসবুক লাইভে এসে সাকিব আল হাসানকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকেই হুমকিদাতা মহসিনকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে দা উঁচিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে হত্যার হুমকি দেন মহসিন তালুকদার। ভারতের কলকাতায় গিয়ে কালীপূজার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন, এমন দাবি করে হুমকি দেওয়া হয় সাকিবকে। এদিকে, কলকাতার ঘটনা নিয়ে সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন, তিনি পূজা উদ্বোধন করতে যাননি কিংবা করেননি। এ ছাড়া পুরো ঘটনার ব্যাখ্যাও সাকিব দিয়েছেন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সাকিব বলেন, ‘সব জায়গায় এসেছে আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। কিন্তু আসলে আমি পূজা উদ্বোধন করতে যাইনি, করিওনি। এটির প্রমাণ আপনারাও পাবেন। ওখানে অনেক সাংবাদিক ভাই ছিলেন, যাদের ওখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ ছাড়া কার্ডে লেখাও আছে কে আসলে পূজা উদ্বোধন করেছেন এবং সেটি উদ্বোধন হয়েছে আমি যাওয়ার আগেই। যে জায়গাটিতে আমাদের অনুষ্ঠানটি হয়েছে, সেটি পূজামণ্ডপ ছিল না। সেখানে একটি স্টেজ ছিল। পুরো অনুষ্ঠানটি সেখানে করা হয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চের পাশেই পূজামণ্ডপ ছিল। গাড়িতে আমার ওঠতে হবে, অনেকগুলো রাস্তা বন্ধ ছিল। তাই পূজামণ্ডপ পার হয়েই আমার যেতে হতো। যাওয়ার সময় পরেশ দা; যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাঁর অনুরোধে আমি প্রদীপ প্রজ্বালন করি। যেহেতু আমি কলকাতায় অনেকদিন খেলেছি, কলকাতার মানুষ আমাকে অনেক পছন্দ করেন। তাই সবার অনুরোধে সেখানে ছবি তুলতে দাঁড়াতে হয়। ছবি তুলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়, হাতাহাতিও হয় কিছুটা। সেই ঘটনার কারণে আসলে আমরা ওদিক দিয়ে আর যেতে পারিনি। পরে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। পুরো ঘটনাটি ছিল এ রকম। হ্যাঁ, যেটা হয়েছে, দুই মিনিটের মতো সময় আমি পূজামণ্ডপে ছিলাম। সেটি নিয়ে সবাই বলেছে। তারা ধারণা করছেন, আমি পূজার উদ্বোধন করেছি। যেটি আমি কখনই করিনি। একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে করব না। তার পরও হয়তো সেখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় সেটি আমি খেয়াল রাখব।’
আর ভক্তের ফোন ভাঙার খবর নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি কখনোই বুঝতে পারি না, আমি অন্য একজনের ফোন ভাঙলে তাতে আমার কী উপকার হবে? যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ফোনটি আমি কখনই ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছিলাম, যেভাবে নিজেকে নিরাপদ রেখে চলা যায় সেই চেষ্টাই করছিলাম। আর সেখানে যেহেতু অনেক মানুষ ছিল। অনেক ভিড় ছিল, সবাই চেষ্টা করছিল ছবি তুলতে। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, তাদের কাছে না গিয়ে কীভাবে আমার কাজগুলো সম্পন্ন করব ইমিগ্রেশনের। এ সময় একজন উৎসুক জনতা আমার গায়ের ওপর দিয়ে এসে ছবি তুলতে যায়। আমি তাকে সরিয়ে দিতে গেলে তার হাতের সাথে আমার হাত লেগে মোবাইলটি পড়ে যায়। হয়তো পরে ভেঙেও গেছে। তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয়, তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। বিশেষ করে করোনার সময় মনে হয় সবারই সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যত দিন এই করোনার প্রভাবটা থাকে।’