সাজেকে হামে আক্রান্ত শিশু ৫ ভাইকে চট্টগ্রামে প্রেরণ
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে একই পরিবারে হামে আক্রান্ত শিশু পাঁচ ভাইকে বুধবার বিকেলে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এখনো সাজেক ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে ১২৩ শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। তাদের চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের তিনটি মেডিকেল টিম। অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল টিমও সেখানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নেওয়া পাঁচ ভাই হলো প্রহিত ত্রিপুরা (৭), রখেন ত্রিপুরা (৮), রকেট ত্রিপুরা (৯), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০) ও দিপায়ন ত্রিপুরা (১১)। এরা সবাই সাজেকের শিয়ালদহ মৌজার লংথিয়ানপাড়ার বাসিন্দা অনীল মোহন ত্রিপুরার সন্তান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সাজেকের অরুণপাড়ায় হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ইউনিয়নের লংথিয়ানপাড়ায় গত রোববার ও মঙ্গলবার আরো দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সাজেকের দুই গ্রাম অরুণপাড়া ও লংথিয়ানপাড়ায় সাত শিশুর মৃত্যু হলো। এখনো এই ইউনিয়নের অরুণপাড়া, লংথিয়ানপাড়া, কমলাপুরপাড়া, তারুংপাড়া ও হাইচপাড়ায় আরো ১২৩ শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। তবে মেডিকেল টিম সেখানে চিকিৎসা সেবা শুরু করার পর নতুন করে কেউ হাম রোগে আক্রান্ত হয়নি বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
পৃথিবীজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে সাজেকে হাম রোগে পরপর সাত শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এই ইউনিয়নের আশপাশের গ্রামের মানুষেরা ছোট সন্তানদের নিয়ে বেশ আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
শিয়ালদহ মৌজার হেডম্যান যুপিইথাং ত্রিপুরা জানিয়েছেন, সাজেকের পাঁচ গ্রামে এখনো শতাধিক শিশু হামে আক্রান্ত। বুধবার বিকেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একই পরিবারের পাঁচ ভাইকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি, গুরুতর আক্রান্ত পাঁচ ভাই এখন সুস্থ আছে। এ ছাড়া সাজেকের পাঁচ গ্রামের আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর ও বিজিবির তত্ত্বাবধানে আরো একটি চিকিৎসকদল লংথিয়ানপাড়ায় এসেছে। ওই মেডিকেল টিমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাবার এবং ওষুধ সামগ্রীও আনা হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের মাঝে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমদ জানিয়েছেন, ‘সাজেকে হামে আক্রান্ত একই পরিবারের পাঁচ শিশুর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বুধবার বিকেলে তাদের সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর আগে তাদের পাঁচজনকে দীঘিনালা নিয়ে আসা হয়। পরে দীঘিনালা থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা পাঁচজনই অসুস্থ আছে। এখনো সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১২৩ জন শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় তিনটি মেডিকেল টিম সেখানে কাজ করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল কাজ করছে।
আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ও দুর্গম ইউনিয়ন সাজেক। এই ইউনিয়নে সাজেক পর্যটনকেন্দ্র ছাড়া বাকি এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম। সেখানকার শিয়ালদহ এলাকাটিকে সবচেয়ে বেশি দুর্গম বলে বিবেচনা করা হয়। প্রায়ই সেখানে দুর্গমতার কারণে খাদ্যাভাব ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালের মে মাসে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই এলাকায় সাতজনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত আরো ৩০ জন জরুরি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। ৬০৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাজেক ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। কিন্তু যোগাযোগ দুর্গমতা ও সীমান্তবর্তী অনতিক্রম্য এলাকা হওয়ায় সরকারি জরুরি চিকিৎসাসেবা সেখানে নিয়মিত পৌঁছায় না।