সাতক্ষীরায় বিজিবি-চোরাচালানি সংঘর্ষ, গুলি

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় কুলিয়া সেতুর মাথায় প্রধান সড়কে বিজিবির ব্যবহৃত এই গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি : এনটিভি

ভারতীয় চোরাচালানের গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আটক করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও চোরাচালানিদের মধ্যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিনগত মধ্যরাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়ার আশু মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে চোরাকারবারিরা আটক করা গলদা চিংড়ির পোনা ছিনিয়ে নেয়। তারা বিজিবিকে বহনকারী ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন আত্মরক্ষার্থে বিজিবি দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গাড়িটি কুলিয়া সেতুর মাথায় প্রধান সড়কের ওপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বিজিবির একটি দল আশু মার্কেটে তাদের মাছের ডিপোতে মধ্যরাতে অভিযান চালায়। এ সময় বিপুল গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আটক করে। তখন তারা জানায়, সরকারকে ইজারার টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। তাদের যথাযথ লাইসেন্স আছে। বৈধভাবে মাছ কেনাবেচা করে। বিজিবি হানা দিলে তারা প্রতিবাদ করে। এ সময় বিজিবি তাদের মাছ ব্যবসায়ী আবু সাঈদকে পিটিয়ে আহত করে। তাকে প্রথমে সখিপুর হাসপাতালে ও পরে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ব্যবসায়ীরা আরও জানায়, গ্রামবাসী মিলে আটক পোনা বিজিবির কাছ থেকে কেড়ে নেয়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও গাড়িতে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা তারা জানে না।

স্থানীয়রা জানায়, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা চিংড়ির পোনার একটি বহরের পিছু ধাওয়া করছিলেন বিজিবি সদস্যরা। চোরাকারবারিরা এই পোনা দ্রুত আশু মার্কেটের মাছ ডিপোতে নিয়ে যায়। এর পরেই তা আটকের ঘটনা ঘটে।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ্ জানান, খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ততক্ষণে সংঘর্ষ থেমে গেছে। তিনি গাড়িতে আগুন দেখেছেন। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।

কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক বলেন, চিংড়ি পোনা ধরাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। রাতে আমি ঘটনা শুনে সেখানে উপস্থিত হই। বিজিবির হামলায় আবু সাঈদ নামের এক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বিজিবির নায়েক মিজানের নেতৃত্বে এই পোনা আটকের ঘটনা ঘটে। তাদের অভিযোগ, ভারতীয় পোনা আনার সময় বিজিবির কিছু সদস্য তাদের কাছ থেকে গোপনে টাকা নেন। আবার ডিপোতে নিয়ে এলে পোনা ধরার নামে টাকা চায়। এমনকি রাস্তায় বহনকালেও বিজিবির কিছু অসাধু সদস্য অর্থ আদায় করে থাকে।

বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ জানান, চোরাচালানের ভারতীয় গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আটকের পরই সংঘবদ্ধ চোরাচালানিরা গ্রামবাসীর সহায়তায় বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা করে। তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় বিজিবি আত্মরক্ষার্থে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে। অবশেষে চোরাচালানিরা হামলা করে বিজিবির আটক করা গলদা চিংড়ির রেণু পোনা ছিনিয়ে নেয়। এরপর বিজিবির ব্যবহৃত গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বিজিবি অধিনায়ক আরও জানান, পরে বিকল্প ব্যবস্থায় তারা বিজিবি সদস্যদের উদ্ধার করে আনেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।