মানবতাবিরোধী অপরাধ

সাতক্ষীরা জামায়াত নেতা আব্দুল খালেকসহ দুজনের রায় যেকোনো দিন

Looks like you've blocked notifications!

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল ওরফে জল্লাদ খালেকসহ দুজনের রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আজ বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য সিএভি (রায় যেকোনো দিন) রাখেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর ছিলেন রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি খালেক মণ্ডলের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আব্দুস সোবহান তরফদার এবং মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

অপর আসামি পলাতক খান রোকনুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।

এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন চার জন। অপর দুই আসামি আব্দুল্লাহ হেল বাকী এবং জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান বিচার চলাকালে মারা যান। এর মধ্যে বাকী জামিনে থাকা অবস্থায় এবং টেক্কা খান পলাতক অবস্থায় মারা যান।

২০১৮ সালের ৫ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয়জনকে হত্যা, দুজনকে ধর্ষণ, এবং ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।

২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখান ট্রাইব্যুনাল।

শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচ জনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী।

এ মামলার চার আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।

২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারজনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে ৮ মার্চ অন্য তিন জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

একই বছরের ১৭ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বুলারাটী গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ-হেল বাকীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯ মার্চ হাজির করা হলে ঢাকায় থাকা ও ধার্য দিনে হাজিরের শর্তে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আব্দুর রউফের হেফাজতে ১০৩ বছর বয়স্ক বাকীকে জামিন দেওয়া হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হলেও ট্রাইব্যুনালে ছয়টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

ছয় অভিযোগ

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে—১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বেতনা নদীর পাড়ে বুধহাটা খেয়াঘাটে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করেন। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী, মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে ধরে কমরউদ্দিন ঢালীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যান ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন সাতক্ষীরা মহকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মরদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীর পাড়ে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ চার থেকে পাঁচ জন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যান। পরে আর তাঁর সন্ধান মেলেনি।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ আষাঢ় সকাল ৭টার দিকে আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসেন নিজেদের বাড়ির পাশে হালচাষ করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে গোলাম হোসেন বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য তাঁকে ধরে নিয়ে পাশের পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করেন।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মো. বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙুলের রগ কেটে দেন রাজাকার বাহিনীর সদস‌্যরা।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের জ্যেষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান একদল পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করেন। সে মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করে এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথণ্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেন। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তাঁর বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটকে ধর্ষণ করেন। এ ছাড়া বৈকারি গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে চার পাকিস্তানি সৈন্য।