সাবেক স্ত্রী খুনের দায়ে স্বামী ও ভাসুর গ্রেপ্তার
গাজীপুরে জনি আক্তার রুপাকে (২০) খুনের অভিযোগে সাবেক স্বামী ও ভাসুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আজ শুক্রবার (১ এপ্রিল) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে তারা জানিছেন–ভাগ্নের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড। গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার হিদাগারী এলাকার রুপার সাবেক স্বামী মোজাম্মেল হক (৩২) এবং তার বড় ভাই জহির আলী (৩৯)। নদী ভাঙনের শিকার জহির আলী একই জেলার ইসলামপুর থানার চেঙ্গানিয়া এলাকায় বসবাস করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ‘গাজীপুর থেকে যমুনার চরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলা কেটে গৃহবধূক রুপাকে খুন করেছে তার সাবেক স্বামী ও ভাসুর। পরে, নিহতের মরদেহ বালি ভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেয় তারা। এ ঘটনার প্রায় তিন মাস পর রহস্য উন্মোচন করতে পারলেও নিহতের মরদেহের সন্ধান মেলেনি।’
পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, ২০১৫ সালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ফাজিলপুর এলাকার রবিউল ইসলামের মেয়ে রুপার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মোজাম্মেলের। এই দম্পতির ঘরে দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবারের অভাব ঘোচাতে মালেশিয়া যান মোজাম্মেল। চার বছর পর দেশে ফিরে তিনি স্ত্রী ও শাশুড়ির কাছে তার পাঠানো প্রায় ৯ লাখ টাকার হিসেব চান। কিন্তু, তারা ওই টাকার হিসেব দিতে পারেনি।
একপর্যায়ে মোজাম্মেলের অনুপস্থিতিতে রুপার সঙ্গে তার স্বামীর বোনের সতিনের ছেলে উজ্জ্বল মিয়ার (২৬) অবৈধ সম্পর্ক হয়। পরে রুপা স্বামী-সন্তান রেখে উজ্জ্বলকে বিয়ে করে তার সঙ্গে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বালিগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন মোজাম্মেল ও জহির।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পরিকল্পনা মোতাবেক রুপাকে তাদের দুসন্তানের বিষয়ে আলোচনার জন্য গ্রামের বাড়িতে আসতে মোবাইল ফোনে অনুরোধ জানান মোজাম্মেল। এর প্রেক্ষিতে কালীগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে গত ৬ জানুয়ারি বিকেলে জামালপুরের মাদারগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেন রুপা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার যমুনা নদীর চরে এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে আলোচনা করবে—এমন কথা বলে মাদারগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাবেক স্ত্রীকে নিয়ে সেখানের উদ্দেশে রওয়ানা দেন মোজাম্মেল। সাবেক এই দম্পতি জামথৈল ঘাট হতে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে যমুনার চরে গিয়ে পৌঁছান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী চরে অপেক্ষা করছিলেন মোজাম্মেলের ভাই জহির। চরে নিয়ে রুপাকে তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে ও গলা কেটে হত্যা করেন ওই দুই ভাই। পরে, নিহতের মরদেহ বালি ভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান তারা।
মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি তদন্ত করতে গিয়ে এ রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। পরবর্তীতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। ঘাতক দুভাই হত্যার কথা স্বীকারও করেছেন।’