সাভারে সরকারি চিকিৎসাসেবা বন্ধ, করোনা নমুনা সংগ্রহে অনিশ্চয়তা
শেষ পর্যন্ত আঘাতটা এলো হাসপাতালের ওপর। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলেন খোদ সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তরুণ এক চিকিৎসক। সাভারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী তিনিই। এ ঘটনায় বাধ্যতামূলকভাবেই ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ আইসোলেশনে গেছেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা। কার্যত লকডাউন ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা হাসপাতাল।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এই ঘটনা চরম আতঙ্ক আর অস্থিরতা ছড়িয়েছে সাভারজুড়ে। যারা এত দিন বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা উপসর্গ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে আসছিলেন, একযোগে তাঁদের সবাই আইসোলেশনে চলে যাওয়ায় সাভারে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা।
এখন কী হবে সাভারবাসীর? কোথায় মিলবে বিনামূল্যে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা? বাড়ি বাড়ি গিয়ে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করবে কে? বিদেশ ফেরত কিংবা কোয়ারান্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গনিরোধ কার্যকর করবে কে? এমন অসংখ্য প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আতঙ্কিত নাগরিকদের মনে।
তবে এত দিন অনেকটা স্বস্তিতেই ছিল সাভার। করোনা সন্দেহে জ্বর, কাশিসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ৪০ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল রাজধানীর মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ)। সবার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।
এরমধ্যে গত রোববার সাভার পৌর এলাকার ছায়াবীথিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যায় এক শিশু। সন্দেহ ছিল, হয়তো শিশুটির রিপোর্ট আসবে পজেটিভ। তখন পর্যন্ত পাঠানো ৩১ জনের নমুনাই শেষ পর্যন্ত নেগেটিভ আসে। সে যাত্রায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ৪১তম পরীক্ষায় এলো দুঃসংবাদ। সাভারে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের তালিকায় প্রথম নাম উঠল হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে কর্মরত এক চিকিৎসকের।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে সাভারে এসে ডিউটি করতেন ওই ডাক্তার। কোথা থেকে, কীভাবে তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, বেশ কয়েকদিন ধরেই নানা রকম উপসর্গে ভুগছিলেন এ চিকিৎসক। অন্য অনেকের মতো নিজেও ভেবেছিলেন সাধারণ সর্দি-কাশি। তা সত্ত্বেও করোনা উপসর্গে অন্যান্যের নমুনার সঙ্গে তাঁর নমুনাও পাঠানো হয় মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ)। গতকাল সোমবার রাতে সে রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর আকাশ ভেঙে পড়ে কর্তৃপক্ষের মাথায়।
একযোগে ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাসপাতালের সব কর্মী আইসোলেশনে যাওয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা।
তবে আরো শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ওই চিকিৎসকের করোনাভাইরাস ধরা পড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অসংখ্য রোগী দেখেছেন। পল্লী চিকিৎসকদের ট্রেনিং দিয়েছেন। একসঙ্গে কাজ করেছেন সহকর্মী অন্য চিকিৎসক ও সেবিকাদের সঙ্গে।
এ ছাড়া এখন সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় রয়েছেন ওই চিকিৎসকের দেখা রোগীরা। তাদের অনেকের নাম থাকলেও নেই পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা। অনেকের নেই কোনো যোগাযোগের মাধ্যম কিংবা মোবাইল ফোন নম্বর। রোগীদের কীভাবে আইসোলেশনে আনা হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্থানীয় নাগরিক সমাজ। আজ মঙ্গলবার থেকে করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ কে করবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
পাশাপাশি সরকারি এ হাসপাতাল কী করে সচল রাখা যাবে, সে ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত আসেনি স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা।
জেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, এখন সবখানেই চিকিৎসক সংকট। চিকিৎসকরা যেখানে কাজেই যোগ দিতে চান না, সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিকিৎসকের কর্মস্থলে নতুন করে চিকিৎসক এবং সেবিকা পাঠানোটা কঠিন।
প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা অধ্যুষিত সাভারে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। রোগী শনাক্ত না হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই যাবে। সব মিলিয়ে সাভারবাসীর এখন কী হবে? সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ কীভাবে করা হবে, বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে অব্যাহত রাখা যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়ে সদুত্তর মেলেনি।