সালথার ঘটনায় আহত একজনের মৃত্যু

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সরকারি অফিস ও থানায় তাণ্ডবের ঘটনায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। এতে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
এদিকে তাণ্ডবের ঘটনায় মিরান মোল্যা (৩৫) নামের আহত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা। এর আগে এ ঘটনায় জুবায়ের হোসেন (১৮) নামের এক যুবক মারা যান। মোট দুই যুবকের মৃত্যু হলো এই সহিংসতায়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, উপজেলা পরিষদ ভবন, ভূমি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও থানা এলাকায় তাণ্ডবের ঘটনায় ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ ১৩ জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামের মো. নুরু শেখ (১৮), বিনোকদিয়া গ্রামের মো. সজিব কাজী (১৯), ইউসুফদিয়া গ্রামের রাব্বি মাতুব্বর (১৯), মিনাজদিয়া গ্রামের মো. ইউনুস মাতুব্বর (৬০), ও গোপালিয়া গ্রামের আমির মোল্যা (৩০)। অন্যরা হলেন, ফুকরা গ্রামের আবুল কালাম শেখ (৩৫), রিপন শেখ (৩২), ইসরাইল ইলিয়াস মোল্যা (২৭), চিলারকান্দা গ্রামের শহিদুল শেখ (৩২), পিসনাইল গ্রামের মো. রুবেল ফকির (২৫), সোনাপুর গ্রামের মো. রাকিবুল ইসলাম (১৮) ও বিনোকদিয়া গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম (১৮)।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানিয়েছেন, সালথার তাণ্ডবের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের দুটি কমিটি করা হয়েছে। এর একটি প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আলীকে, অপর কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্যাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে সালথার ওই রাতের ধ্বংসযজ্ঞ শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকার অবস্থা এখনো থমথমে। উপজেলা পরিষদজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কাঁচ আর আসবাবপত্রের টুকরা। উপজেলা সদরের বাতাসে পোড়া গন্ধ, মানুষের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। টানা তিন ঘণ্টা তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপজেলা পরিষদ এলাকা। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, সোমবার রাতে চালানো তাণ্ডবের ঘটনা এখনো চোখে ভাসছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, সালথা দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা হলেও এমন ঘটনা কখনো ঘটতে দেখিনি। এই ধরনের ভয়াবহ তাণ্ডব প্রথম দেখল সালথাবাসী। এ কারণে সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
ঘটনার ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সালথায় আসার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি উচ্চ পর্যায়ের দল। কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির নেতৃত্বে সরেজমিনে তারা আসবেন ঘটনার বিস্তারিত জানতে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এ সময় সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতে মানুষ ছোটাছুটি করে। পরে স্থানীয়রা জড়ো হয়। মানুষের ভিড় দেখে মারুফ সুলতানা ফুকরা বাজার থেকে চলে আসেন। পরে হেফাজতের এক আলেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও থানায় এই তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা তিন ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তাণ্ডবচলাকালে ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পর্ণ পুড়িয়ে দেয় তারা। এ ছাড়া সাংবাদিকের একটি মোটরসাইকেলসহ তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫৮৮ রাউন্ড শট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে।