সালমান শাহ হত্যা মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

Looks like you've blocked notifications!
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ফাইল ছবি

অমর চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সিএমএম কোর্টের ডেসপাস (আদানপ্রদান) শাখায় এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।

ডেসপাস শাখার ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান ভূঁইয়া এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ ডেসপাস শাখায় এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে এটি সংশ্লিষ্ট জিআর শাখায় পাঠানো হবে। এর পরে এটি বিচারকের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’

এসআই আবুল আরো বলেন, এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন ৬০০ পৃষ্ঠার অধিক। আর বিচারকের কাছে উপস্থাপনের আগে এতে কী আছে, তা বলা সম্ভব না।

এ বিষয়ে সালমান শাহ হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে আমরা এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করব। আমরা ও সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নই।’

এদিকে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইর মহাপরিচালক ও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘সালমান শাহ রহস্যজনক মৃত্যুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তদন্তে। আমরা সালমানের স্ত্রী সামিরাসহ সন্দেহভাজনদের বক্তব্য নিয়েছি। সব মিলিয়ে এটিই প্রতীয়মান হয়েছে যে পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পারায় আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ।’

এর আগে সালমান শাহ হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ মার্চ নির্দেশ দেন আদালত। গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ এ আদেশ দেন।

সেদিন সালমান শাহ হত্যা মামলার আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ জানান, মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিচারক নতুন করে দিন ধার্য করেছেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ নিহত হন। সে সময় তাঁর বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানের বাবা তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ এনে সিএমএম আদালতে একটি অভিযোগ করেন।

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগটি একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।

পরবর্তী সময়ে একই বছরের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করে সিআইডি। একই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।

সিআইডির দাখিল করা প্রতিবেদনে সালমানের বাবা সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।

ওই রিভিশন মামলার ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি ফের বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর ১২ বছর ধরে এ মামলা বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সিএমএম হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে আরেকটি নারাজি দাখিল করেন। এর শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি র‍্যাবকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন। পরে ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রিভিশন মঞ্জুর করেন।

এরপর ২০১৬ সালের শেষ দিকে পিবিআইকে নতুন করে তদন্তভার দেওয়া হয়। সেই তদন্তের সূত্র ধরেই গতকাল কথা বলেন পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার।