সাহেদ এখন ঢাকায়, গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তি করেন

Looks like you've blocked notifications!
র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ। ফাইল ছবি

করোনা টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণাসহ অর্ধশতাধিক মামলার আসামি ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদকে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ বুধবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাঁকে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সকাল ৮টার দিকে তাঁকে সাতক্ষীরা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় রওনা হয় র‍্যাব। এক ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে হেলিকপ্টারটি ঢাকায় তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

আজ বুধবার ভোর  ৫টা ১০ মিনিটের দিকে দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর সীমান্ত এলাকার বেইলি ব্রিজের নিচ দিয়ে লবঙ্গবতী নদীপথে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন সাহেদ। এ সময় তিনি জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্টের ওপর কালো রঙের বোরকা পরে ছিলেন।

তখন আগে থেকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা সাহেদকে র‌্যাব সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করেন। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের সাতক্ষীরা কোম্পানি কমান্ডার বজলুর রশীদ। তিনি জানান, সাহেদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও তিনটি গুলি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর সঙ্গে র‌্যাব সদস্যদের ধস্তাধস্তি হয়। এ কারণে সাহেদের বোরকা ও প্যান্টে কাদা ভরে যায়।

কয়েক দিন ধরে সাহেদকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে আসছিল।

এর আগে র‌্যাব সাহেদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পথ রুখতে তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করে। অবশেষে চোরাপথে ভারতে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হলো সাহেদ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সাহেদের দাদা এমদাদুল করিম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। এ সময় তাঁরা সাতক্ষীরা মহকুমার দেবহাটায় বসবাস শুরু করেন। পরে তাঁরা সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল কামাননগরে বসবাস করতে থাকেন। সাহেদের মা সাফিয়া করিম সাতক্ষীরা জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মারা যান। এর আগে ১৯৯৮ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াকালে সাহেদ নানা অপরাধ করে ঢাকায় পালিয়ে যান। সেখানে তিনি গড়ে তোলেন রিজেন্ট হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

গ্রেপ্তারের পর সাহেদ করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত ৬ জুলাই বিকেল থেকে রাত অবধি উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের মূল কার্যালয়ে প্রথমে অভিযান পরিচালনা করেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখান থেকে অভিযান শেষে হাসপাতালটির মিরপুর শাখায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় হাসপাতালটির আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করা হয়।

এরপর ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের কোভিড ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয় র‍্যাব-১। এ ছাড়া উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের রিজেন্ট গ্রুপের মূল কার্যালয়ও সিলগালা করা হয়। ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়।

রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে চার হাজার করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে। একজন কম্পিউটার অপারেটর বসে বসে সাড়ে চার হাজার রিপোর্ট তৈরি করেছেন। মনগড়া রিপোর্ট পজিটিভ-নেগেটিভ দিয়েছেন।

তা ছাড়া মোট ১০ হাজার রোগীর করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতাল। মাত্র চার হাজার ২৬৪টি নমুনা সরকারিভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়। এ ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রতারণার কৌশল গ্রহণ করে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারো জ্বর থাকলে তাকে পজিটিভ আর জ্বর না থাকলে নেগেটিভ রিপোর্ট প্রদান করে।