সিনহা রাশেদের মৃত্যু : টেকনাফের ওসি প্রদীপকে প্রত্যাহার
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের নিহতের ঘটনায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর দপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এ বি এম দোহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গত শুক্রবার রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় আজ বুধবার পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসসহ পুলিশের নয়জন সদস্যকে আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এ মামলা করেন। দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত মামলাটি র্যাবকে সুপারভাইজ করতে বলেছেন। সেইসঙ্গে সাত দিনের মধ্যে মামলার কী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মামলার আর্জিতে নয় আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ১ নম্বর আসামি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পূর্ব হুলাইন গ্রামের বাসিন্দা ও টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী (৩১); ২ নম্বর আসামি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারুয়ারতলীর বাসিন্দা ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সাহা (৪৮); ৩ নম্বর আসামি উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত; ৪ নম্বর আসামি পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান; ৫ নম্বর আসামি পুলিশ কনস্টেবল কামাল হোসেন; ৬ নম্বর আসামি পুলিশ কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন; ৭ নম্বর আসামি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া; ৮ নম্বর আসামি টুটুল এবং ৯ নম্বর আসামি পুলিশ কনস্টেবল মো. মোস্তফা।
মামলার আর্জিতে ১০ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সাক্ষী উপস্থাপন করার কথাও লেখা আছে।
এই ঘটনার পর গত রোববার বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর আজ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে সরিয়ে নেওয়া হলো।
আজ দুপুরেই কক্সবাজার সৈকতে অবস্থিত সেনাবাহিনীর রেস্টহাউস জলতরঙ্গের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। তাঁরা বলেছেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব নেই। আর এ ঘটনায় দুই বাহিনীর মধ্যে চিড় ধরবে না।
সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীতে থাকার সময় তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করেন। এসএসএফের সদস্য হিসেবে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায়ও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব প্রয়াত মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি ১৯৯৯ সালে বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এসএসসি এবং ২০০১ সালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্রছাত্রীসহ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার আসেন। প্রায় এক মাস তাঁরা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন।
এদিকে, ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের মা নাসিমা আক্তারকে ফোন করে সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানিয়েছেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
নাসিমা আক্তার এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিচার চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমের বিচারের আশ্বাস দেন। নাসিমা আক্তার ফোন করে সমবেদনা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।