সিনহা হত্যা মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২৯, ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর
কক্সবাজারে আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ৭ম দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিনে মামলার অন্যতম সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য ও জেরা দুদিনেও সম্পন্ন হয়নি। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২৯-৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমালের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ গত দুই দিনেও শেষ না হওয়ায় আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আগামী ২৯-৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর ধার্য করেন।
মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যা মামলায় সপ্তম দফার শেষ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ অসমাপ্ত থেকে গেছে। এ কারণে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ২৯, ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন। সপ্তম দফায় তিন দিন ধরে চলা সাক্ষ্যগ্রহণের দুদিনই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এর আগের দিন অপর গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সহকারী পুলিশ সুপার মো. জামিলুল হকের জেরা সম্পন্ন হয়। এই মামলায় এ পর্যন্ত ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।’
আদালতের কার্যক্রম শেষে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ অন্য আসামিদের প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সিনহা হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রমে এই প্রথম সাক্ষগ্রহণ শেষে আজ ওসি প্রদীপকে খুবই বিমর্ষ দেখা যায়।
আদালতের একটি সূত্রমতে, তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দি, সাক্ষগ্রহণ ও জেরা চলাকালেও ওসি প্রদীপ বিমর্ষ ছিলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় ওসি প্রদীপসহ এই মামলার ১৫ আসামিকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে।
এরপর মেজর সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামিদে মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।