সিরাজগঞ্জে দুই মাসে ১২ জনের আত্মহত্যা

Looks like you've blocked notifications!
প্রতীকী ছবি

সিরাজগঞ্জে আত্মহত্যার মাত্রা বেড়েছে। গত দুই মাসে (৪ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) জেলায় ১২ জন নারী-পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছয় জন নারী ও ছয় জন পুরুষ রয়েছে। গলায় রশি ও ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে তারা। 

পারিবারিক কলহ ও বিষণ্নতা থেকে এ ঘটনা বেশি ঘটছে বলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা ও সচেতনতা বাড়াতে পারলে এ ঘটনা কমে আসবে। জেলায় প্রতি বছর বা মাসে ঠিক কত মানুষ আত্মহত্যা করেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরো কার্যালয়। 

তবে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, বিভিন্ন থানা পুলিশ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ১২ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করে। সবশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াহাটি গ্রামের মো. তামিম (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করে।

আত্মহত্যার ঘটনায় মৃত ব্যক্তিরা হলো- সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছাইদুর রহমানের মেয়ে শৈলী (১১), বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান (১৬), এনায়েতপুরের মালয়েশিয়া প্রবাসি সাইদুল ইসলাম (৩৫), সলঙ্গা থানার এরানদহ গ্রামের নুরন্নবী শেখ (৩২), চৌহালী উপজেলার ওমারপুরের মরিয়ম সুন্দরী (১৯), শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের আরিফুল ইসলাম (২১), শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের তেলকুপি গ্রামের আলতাফ হোসেনের মেয়ে আল্পনা খাতুন (১৪), রায়গঞ্জ উপজেলার তেকুরী গ্রামের জরিনা খাতুন (৪৮), সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের ডিগ্রিরচরের ইসরাইল হোসেন (৫০), সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি এলাকার ফাতেমা খাতুন (৩৫), উল্লাপাড়া উপজেলার ভুতবাড়িয়া গ্রামের রত্না খাতুন (৩৭) ও সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াহাটি গ্রামের মো. তামিম (১৪)।

জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরো কার্যালয়ের পরিসংখ্যান সহকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বা মাসে জেলায় কতজন নারী পুরুষ আত্মহত্যা করে, তার সঠিক তথ্য জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ে নেই। এ বিষয়ে বিভিন্ন এনজিও ভালো বলতে পারবে।’

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘আত্মহত্যা সামাজিক ব্যাধি। কেউ যেন আত্মহত্যা না করে সে বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর দরকার। এই বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। মসজিদে জুম্মার খুতবায় আত্মহত্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ। এ সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম কি বলে মুসল্লিদের অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে আত্মহত্যা রোধে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। কি কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে এটি নির্ণয় করা দরকার। এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। বেশি বেশি জনসচেতনতা বাড়াতে পাড়লে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।’

আত্মহত্যার বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওয়ালিউর হাসনাত সজীব বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শহরে আত্মহত্যার মাত্রা বেড়ে গেছে। শুধু সিরাজগঞ্জে না, পুরো বাংলাদেশে আত্মহত্যার মাত্রা বাড়ছে। বিভিন্ন বছরের পরিসংখ্যান যাচাই করলে দেখা যাবে, আত্মহত্যার মাত্রা ২০১৭ সালে যা ছিল ২০২১ সালে এসে অনেক বেশি। বছর শেষে ২০২২ সালের পরিসংখ্যানটা জানতে পারব। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০ ভাগ আত্মহত্যা মানসিক কারণে হয়। আবার মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে বিষণ্নতায় ভুগছেন এমন ৭০ ভাগ রোগী আত্মহত্যা করেছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আত্মহত্যা যে বেড়ে গেছে এর সামাজিক অনেক কারণ আছে। আমরা এখন ডিভাইস নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। যার কারণে পরিবারের বন্ধন সিথিল হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সেই আগের মতো সম্পর্ক নেই। বাবা-মা নিজেরাও ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল। সন্তানরাও ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল। সন্তানের চাওয়া পাওয়াগুলো এখন অনেক বাবা-মা বুঝতে পারে না। এ সব কারণে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই বোঝাপড়ার কারণেও অনেক সময় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। যদি সচেতনতা বাড়াতে পারি তাহলে আত্মহত্যার ঘটনা কমে আসবে।’