সিরাজগঞ্জে মাঠজুড়ে হলুদের ঢেউ
সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে ফুলের সৌন্দর্য। ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে চারপাশে। মৌমাছি এসে খেলা করছে ফুলে ফুলে। খেতজুড়ে ফোটা সূর্যমুখী ফুলের হলদে সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছে শত শত মানুষ। কেউ কেউ ফুলের সৌন্দর্যকে নিজের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি করছেন।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ বন্যাকবলিত এলাকা। বন্যার কারণে এখানে জমিতে প্রচুর পলি পড়ে। এই পলিমাটি তেল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বন্যার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আর্থিক অনুদানের জন্য কৃষি বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য জেলার তিন হাজার কৃষককে প্রণোদনা এবং বীজ-সার প্রদান করা হয়। এবার জেলার বেলকুচি ও যমুনা নদীর চরে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ করা হয়েছে। শুধু বেলকুচিতে তিনশ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ করা হয়েছে।
প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলতে সূর্যমুখী এখন সিরাজগঞ্জের ফসলের মাঠজুড়ে হলুদের গালিচা বিছিয়ে অপরূপ সাজে সেজে উঠেছে। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী ফুল চাষে এবার সাফল্য পেয়েছেন কৃষকেরা। ফুল থেকে উৎপাদিত তেল ও খৈল বিক্রি করে লাভবান হবেন কৃষকেরা। ভোজ্য তেল এবং গরুর জন্য খৈল তৈরির উদ্দেশে সূর্যমুখী ফুলের চাষের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফুল চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকছেন অন্যান্য কৃষকেরাও।
সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গাছ ও ফুল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বেলকুচি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কল্যান প্রসাদ পাল জানান, বেলকুচি উপজেলা বন্যাপ্রবণ এলাকা। এখানে প্রত্যেক বছর বন্যার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পরে জমিতে প্রচুর পরিমান পলি পড়ায় জমি তখন তেল জাতীয় ফসল চাষের উপযোগী হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘বন্যায় যেসব কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি পুনর্বাসন আওতায় বেলকুচি উপজেলার তিনশ কৃষককে সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বীজ সহায়তা দেওয়া হয়। ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর বেলকুচি উপজেলায় তিনশ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় তিন হাজার কৃষককে সূর্যমুখী চাষের জন্য প্রণোদনা ও বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সূর্যমুখী চাষাবাদের কারণে দেশ তেলসমৃদ্ধ হবে। সরিষার তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেলের মান ভালো। বিঘাতে প্রায় সাত-আট মন ফলন হয়। সূর্যমুখী চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশ থেকে তেল আমদানি করতে হবে না। এতে খরচ অনেকাংশে কমে আসবে।