সিলেটে শ্রমিক নেতা খুন, খুলছে মামলার জট
সিলেটে দুর্বৃত্তদের হাতে শ্রমিক নেতা ইকবাল হোসেন রিপন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রেলওয়ের তিন কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবার। আর এ হত্যাকাণ্ডের দেড় মাস আগের এক সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে 'ক্লুলেস মার্ডারে'র রহস্য খুলতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
আসামিরা হলেন বরইকান্দি গ্রামের ১ নম্বর রোডের ইজাজুল (২৮), রিমু (২৮), মুহিবুর রহমান মুন্না (৩০), মোস্তফা (৪০), মিন্টু (৩৮), সেবুল (২৩), কাইয়ুম (২৮), বদরুল (২৭), ইসমাইল (২৮), বরইকান্দি গাঙ্গু গ্রামের নোমান (৩৯), রেলওয়ের সিলেট বিভাগীয় প্রকৌশলী আকবর হোসেন মজুমদার (৪৮), বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা ও রেলস্টেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা মতিন ভুঁইয়া (৫৫) ও রেলওয়ের ওয়ার্কার সুপারভাইজার শহিদুল হক (৫৮)।
এখন পর্যন্ত দুজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ফজল।
পুলিশ জানায়, সিলেট বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন রিপন গত ১০ জুলাই সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। এর প্রায় দেড় মাস আগে তাঁর ওপর হামলা করবে বলে হুমকি দেওয়ায় তিনি দক্ষিণ সুরমা থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।
এ ঘটনায় নিহত রিপনের স্ত্রী ফারজানা বেগম তমা বাদী হয়ে গতকাল শনিবার দক্ষিণ সুরমা থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। অজ্ঞাত আসামি করেছেন আরো পাঁচ থেকে সাতজনকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ইকবাল হোসেন রিপন সিলেট বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি টেকনিক্যাল রোডে জারিন ট্রেডার্স নামে একটি জ্বালানি তেলের দোকান চালাতেন। মামলার ১১ নম্বর আসামি সিলেট রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আকবর হোসেন মজুমদার ও ১৩ নম্বর আসামি শহিদুল হকের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগে থেকে বিরোধ চলে আসছিল।
গত ১০ জুলাই রাত প্রায় ১০টার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মার্কেটের মালিক বাবলা আহমদকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হোটেল বাবনার সামনে আসামাত্র আকবর ও শহিদুলের হুকুম ও মদদে ইজাজুল, রিমু ও মুহিবুর রহমান মুন্না উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। সঙ্গে থাকা বাবলা আহমদ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে স্থানীয় কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের ভেতরে আশ্রয় নেন।
একপর্যায়ে রিপন আত্মরক্ষার্থে স্থানীয় হোটেল সিতারার দিকে গেলে মোস্তফা, সেবুল ও কাইয়ুম এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে। তখন শ্রমিক নেতা রিপন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বদরুল ও নোমান ধারালো রামদা দিয়ে বারবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপাতে থাকে।
রিপনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে দ্রুত ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রিপনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বাবলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ফজল বলেন, ‘এ মামলায় বরইকান্দি এলাকার নোমান আহমদ ও সাদ্দাম আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের স্পেশাল ফোর্স কাজ করছে।’
তবে শনিবার মধ্যরাতে একটি সূত্রে জানা গেছে, আসামি রেলওয়ের ওয়ার্কার সুপারভাইজার শহিদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে এখনো পুলিশের পক্ষ থেকে সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি