সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি জোরদারের সুপারিশ পরামর্শক কমিটির
সীমান্ত দিয়ে জনগণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি জোরদারের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল বুধবার আয়োজিত পরামর্শক কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে এই সুপারিশ করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
সভায় বলা হয়, বর্ডার দিয়ে জনগণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি জোরদার করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা কাম্য নয়। ভারত থেকে আসা কয়েকজন সংক্রমিত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যান। চলাচলের সময় তাঁরা যাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করা প্রয়োজন।
সভায় আরও বলা হয়, উচ্চ সংক্রমণশীল দেশ থেকেও বাংলাদেশে যাতায়াত বন্ধ করা বা সীমিত করা প্রয়োজন এবং এসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পরিমর্শক কমিটির সভায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও পাশের দেশের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য সার্বিক প্রস্তুতি, বিশেষ করে অক্সিজেন সংকট তৈরি প্রতিরোধের নিমিত্তে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। এ ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা ও গৃহীত উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় পরামর্শক কমিটি। সভায় সরকারের এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। এক হাজার ২০০ বেডের মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল চালু করায় এই কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করে এবং সরকারকে অভিনন্দন জানায়। একইসঙ্গে ওই হাসপাতালে মেটারনিটি কর্নার/ইউনিটের ব্যবস্থা করার জন্যেও বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ ছাড়া কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক না করে জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের উদ্যোগ বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শক কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে জনবল তৈরির দিকেও লক্ষ্য রাখার সুপারিশ করা হয়। বিশেষায়িত হাসপাতালে নির্দিষ্ট রোগের রোগীদের করোনার বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থার ব্যাপারে মত দেওয়া হয়।
ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার ‘ডাবল ভ্যারিয়েন্ট’ (নতুন প্রজাতি) চিহ্নিত হয়েছে। এই প্রজাতি আমাদের দেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি সংকটময় হতে পারে বলে জাতীয় কারিগরি কমিটি আশঙ্কা প্রকাশ করে। এ জন্য ভারত থেকে আসা সব যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন থাকা নিশ্চিত করতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়।
এদিকে, দেশের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বিধিনিষেধ অব্যাহত রেখেছে। এই বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিধিনিষেধ পালনের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ আগের মতো চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেওয়া হয়।
জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভায় বলা হয়, কোভিড টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় কিটের দাম প্রায় তিন হাজার বা দুই হাজার ৭০০ টাকা থেকে কমে ৮০০ বা এক হাজার টাকায় নেমে গেছে। এর প্রেক্ষিতে বেসরকারি পর্যায়ে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে মূল্য পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে সভায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। একই সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে আরটি-পিসিআর টেস্টের মূল্য দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাণশক্তি ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সে জন্য কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরেক দল চিকিৎসক (নিউসেট) প্রস্তুত করা প্রয়োজন। লকডাউনের সময় চিকিৎসকদের যাতায়াত সহজ রাখা, মানসম্মত প্রয়োজনীয় পিপিই পর্যাপ্ত সরবরাহ করা এবং তারা তা পাচ্ছে কিনা, সেটি মনিটরিং করা প্রয়োজন। সেবা, চিকিৎসার মান উন্নয়নে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, নার্স, টেকনিশিয়ান, এনেসথেসিস্ট নিয়োগের কার্যক্রমকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। এসব ক্ষেত্রে এখনও জনবলের সংকট রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সরকারের কাছে নার্স নিয়োগেরও সুপারিশ করা হয়।