সুনামগঞ্জে বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

Looks like you've blocked notifications!
সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত একটি এলাকা। ছবি : এনটিভি

গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে ঢলের পানি হাওরের নিচু এলাকায় প্রবেশ করে আরো নতুন নতুন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সব থেকে বেশি বন্যাদুর্গত জেলার শিল্পনগরী ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার অনেক গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে।

এদিকে, টানা চার দিন পানিবন্দি থাকা মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এখনো জেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসনালয়, সরকারি বেসরকারি ভবন, রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ সব কিছুই পানির নিচে ডুবে আছে।  ১১ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বেশির ভাগ বাড়িঘর থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় অসহায় মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে এখনো গবাদি পশু নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

 প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্তিতির ভয়াবহতা উল্লেখ করে দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, মেডিকেল টিমসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

নতুন প্লাবিত এলাকাগুলো হলো দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলা। ঢলের পানি সুরমা নদী এবং হাওর হয়ে ওই সব এলাকা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি করছে।

দিরাই উপজেলার সংবাদকর্মী আবু হানিফ জানান, গত কয়েক দিনে দিরাইয়ে তেমন পানি ছিল না। তবে আজ মঙ্গলবার সকালের পর থেকে কিছু কিছু গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে, ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ সবকটি ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে আছে। ছাতকের মূল সড়কে পানি থাকায় সুনামগঞ্জ সদরসহ সিলেটের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুরমা নদীর পানি ছাতক অংশে ১০০ সেন্টি মিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ছাতক উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ বলেন, 'ছাতকের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রত্যেক ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই বন্যার পানি অনেক উপরে উঠে গেছে। মানুষ খুব দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ছাতকের মূল সড়কটিতে পানি উঠে যাওয়া সুনামগঞ্জ ও সিলেটের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।'

একইভাবে সুনামগঞ্জ সদর তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরও পানির নিচে তলিয়ে আছে।

তাহিরপুর উপজেলার হলহলিয়া চরগাঁও গ্রামের মো. আবুল কাসেম বলেন, 'গত তিন দিন পানি কয়েক ফুট উপরে ছিল। রাস্তাঘাট বাড়িঘর সবকিছু পানির অনেক নিচে ছিল কিন্তু আজকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো পানি রয়ে গেছে। আর বৃষ্টিপাত না হলে পানি নেমে যাবে। কিন্তু মানুষ খুব বিপদের মধ্যে আছে।'

তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর এবং দোয়ারাবাজারের বেশির ভাগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় টানা চার দিনের মতো সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।

এদিকে বন্যা দুর্গতরা জানান, গত কয়েক বছরে একসঙ্গে এতো পানি দেখেনি তারা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, 'সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই বন্যা দেখা দিয়েছে। যদিও আজকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে কিন্তু মানুষ খুব কষ্টে আছে। তবে যত দিন বন্যা থাকবে মানুষকে উপজেলার পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা করা হবে।'

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবীর বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, 'এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গতদের মধ্যে উপজেলার মাধ্যমে সব ধরনের সহায়তা তুলে দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। উপজেলার সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।'