সুনামগঞ্জে বন্যা : ৪৫ হাজার বাড়িঘর ও ৩৮৪ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি

Looks like you've blocked notifications!
সুনামগঞ্জে বানভাসি মানুষের দুর্গতি পিছু ছাড়ছে না। ছবি : এনটিভি

সুনামগঞ্জে বানভাসি মানুষের দুর্গতি পিছু ছাড়ছে না। জেলার বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গত ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জ।

জেলার প্রায় সব উপজেলা হাঁটু থেকে কোমরপানি পর্যন্ত ডুবে ছিল। গত ১৮ দিনেও জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তবে, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কম হওয়ায় বন্যার পানি শহর এলাকা থেকে কিছুটা কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

হাওর এলাকার রাস্তাঘাট, হাটবাজার, বাড়িঘর এখনও বন্যার পানির নিচে রয়েছে। মানুষজন এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বেশির ভাগ বাড়িঘর ঢেউয়ে ভেঙে যাওয়ায় মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না। মানুষ খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছে। তবে, বেশি বিপাকে পড়েছে হাওর এলাকার ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষ। বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে না নামায় মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাসভাসি মানুষ বলছেন—এত দীর্ঘ বন্যার কবলে তাঁরা কোনো দিন পড়েননি। বাড়িঘর হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। সব কিছু হারিয়ে মানুষ ঘরেও ফিরতে পারছেন না।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের খুশবুল বেগম (৫০) জানান, তাঁর আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এবারের বন্যায় সব নিয়ে গেছে। ঘরের চাল, টিন—সব বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন শুধু ভিটে পড়ে আছে। কোনো উপায় নেই ঘরে যাওয়ায়। তাই, নিরুপায় হয়ে সড়কের পাশে ত্রিপল দিয়ে থাকছেন।

একই এলাকার কবীর হোসেন (৩৪) জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পর থেকে পানি ঢুকতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যেই সব ভাসিয়ে নেয়। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানসহ পানিতে ভেসে যাচ্ছিলাম। পরে পাশের মানুষজন আমাদের উদ্ধার করে সড়কে তোলে।’

এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়—এবারের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের বাড়িঘর, সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় পানি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সঠিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে, গৃহপালিত পশু, হাস-মুরগি ও ছাগলের মৃত্যু হয়েছে।

এবারের বন্যায় জেলার এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ২৮৮টি বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। জেলার সড়ক ও জনপথ ও এলজিইডির সড়ক মিলিয়ে মোট ৩৮৪ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ৭২২টি গরু, ৩৭টি মহিষ, ৬৬৯টি ছাগল, ৫১৪টি ভেড়া, ৯৭ হাজার  হাঁস এবং দুই লাখ ৮৮ হাজার মুরগি মারা গেছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া হয়েছে। শিগরিরই তাদের মধ্যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে যাতে তারা বাড়িঘর মেরামত এবং অর্থ দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারে।