সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে গবাদিপশুসহ আশ্রয়ে শতাধিক পরিবার
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করার কয়েক মুহূর্তেই বসতঘরের ভেতরে কোমর থেকে গলাপানি হয়ে যায়। কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে মানুষ জানমাল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছোটেন। কিন্তু, কোনো কোনো এলাকার আশপাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় বন্যার্ত মানুষ নিরুপায় হয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের দুপাশে আশ্রয় নিয়েছেন।
কোনোমতে টিন দিয়ে, কেউ ত্রিপল দিয়ে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে কোনোরকমে থাকছেন। সঙ্গে গবাদিপশুও রেখেছেন। দুই সপ্তাহ ধরে এভাবেই কোনোমতে জীবন পার করছেন বন্যার্ত অনেক পরিবার। তবে, তাঁরা সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়ায় কেউ তাঁদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।
সদর উপজেলার জানিগাঁও গ্রামে তারা মিয়া (৭০) বলেন, ‘এ জীবনে এত বড় বন্যা দেখিনি। এটা সব বন্যাকে হার মানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ পানি চলে আসায় কোনোমতে জীবন নিয়ে রাস্তায় উঠেছি। কিন্তু, এখানে কেউ দেখে না, সবাই গাড়ি নিয়ে চলে যায়।’
একই এলাকার খুশবু বেগম (৬০) বলেন, ‘সব হারিয়ে কোনোমতে সড়কে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু, কেউ একটু দেখে না। আমাদের সব শেষ। ঘরের ভেতরে কিছু অবশিষ্ট নেই, সবকিছু স্রোতে ভেসে গেছে। আমরা বাড়িতে কীভাবে ফিরব, তাও বলতে পারছি না। এখনও ঘরের মধ্যে কাদা।’
হুসনাহার বানু (৩৫) নামের আরেক বন্যার্ত বলেন, ‘ছয় বাচ্চা নিয়ে সড়কের একটা কুপি-ঘরে আছি আজ ১৪ দিন। এখন ঘরের ভেতরে পানি। ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। এ সড়কে কত দিন থাকতে হবে, তাও জানা নেই। আল্লাহ যদি রক্ষা না করেন, তা হলে আর রক্ষা নেই।’
মহাসড়কে আশ্রয় নেওয়া কাহার মিয়া বলেন, ‘নিজেরা তো কোনোমতে থাকছি চিড়া-গুড় খেয়ে, কিন্তু, গরু-ছাগলের খাওয়া না থাকায় খুব বিপদে আছি। কয়েকটা গরু স্রোতে ভেসে গেছে।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরীয়ার জানিয়েছেন, মহাসড়কে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে দুদিন আগে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সড়তে আশ্রয় নেওয়া মানুষের তালিকা করা হচ্ছে, যেন তাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা যায়।