সুন্দরবনের বাঘ লোকালয়ে, লাঠি হাতে গ্রামবাসীর পাহারা
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় একাধিক রাতে চিংড়িঘের পাহারা দিতে এবং মাঠে গরু আনতে গিয়ে টর্চের আলোতে বাঘ দেখতে পাওয়ায় দুটি ইউনিয়নে ২০টি গ্রামের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
সুন্দরবনের গহীন থেকে লোকালয়ে ঢুকে প্রায় ১০ কিলোমিটারের জনবসতি এলাকাজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে বাঘটি খুব বেশি বড় নয়, তাই দিনে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকছে। আর খাবারের জন্য রাতে বের হয়ে পড়ছে। আবার কেউ কেউ ধারণা করছে বাঘ নয়, এটি বাঘডাশা কিংবা মেছোবাঘ হয়ে থাকতে পারে।
গত ছয়দিন ধরে এ জনপদের লোকালয়ের নরম মাটিতে দেখা যাচ্ছে বাঘের পায়ের ছাপ। এতে আতঙ্কে লোকজন রাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এসব জনপদে মানুষ এখন বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজেরাই লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছে। লোকজনকে সতর্ক করতে মসজিদ থেকে করা হচ্ছে মাইকিং।
বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে চিংড়িঘের পাহারা দিতে গিয়ে প্রথমে একটি বাঘ দেখতে পান ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন খান। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে বাঘটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন মসজিদের মাইক থেকে গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়ার সংবাদ জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী পার হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া এই বাঘটি ১০ কিলোমিটার ভিতরে শুক্রবার রাত ৮টায় আবারও দেখা মেলে। ওই দিন রাতে মাঠে গরু আনতে গিয়ে একই উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালি গ্রামে বাঘ দেখতে পান কৃষক কামাল হোসেন হাওলাদার। এর পরও মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হয়।
গত শনিবার সকালে বাঘটির পায়ের ছাপ দেখতে পায় বনবিভাগ ও এলাকাবাসী। তবে বাঘ খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয় তার। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের মাঠে গরু আনতে গিয়ে বাঘের আক্রমণ থেকে দৌড়ে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন মো. হাফিজুর রহমান শেখ নামের এক কৃষক। তিন রাতে শরণখোলা উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে বাঘ দেখতে পাওয়ায় ধানসাগর ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
এসব জনপদে মানুষ এখন বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজেরাই লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছে। বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সতর্ক থাকতে মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
বাঘের আক্রমণ থেকে দৌড়ে প্রাণে রক্ষা পাওয়া খোন্তাকাটা ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের মো. হাফিজুর রহমান শেখ বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাঠে গরু আনতে যাই। গরু খুঁজতে থাকার একপর্যায়ে টর্চের আলো পড়ে বাঘের মুখে। বাঘ আমার দিকে তেড়ে এগিয়ে এলে স্যান্ডেল মোবাইল ফেলে দৌড়াতে শুরু করি। একপর্যায়ে পায়ে লুঙ্গি পেঁচিয়ে পড়ে যাওয়ার পর লুঙ্গি হাতে নিয়ে দৌড়ে প্রাণে বেঁচে এসেছি।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘটি যাতে মানুষ মেরে না ফেলে বা জানমালের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাঘটি আবারও দেখতে পেলে দ্রুত বনবিভাগকে জানাতে বলা হয়েছে। যাতে বাঘটিকে আটকিয়ে সুন্দরবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, লোকালয়ে যাতে বাঘসহ বণ্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের ৬০ কিলোমিটার লম্বা বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থ ছাড় পাওয়া গেলে দ্রুত এই বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদীও পুনর্খনন করা হবে।