সেই ফারহানাকে মোটরসাইকেল কিনে দেবেন শ্বশুর
মোটরসাইকেল চালিয়ে গায়ে হলুদের আসরে যাওয়া কনে ফারহানা আফরোজ ড্রিমিকে নতুন একটি মোটরসাইকেল উপহার দেবেন তাঁর শ্বশুর আবদুর রশিদ শেখ। পুত্রবধূর মোটরসাইকেল চালানোর শখ দেখে তাঁর (কনে) পছন্দের একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
যশোর শহরের সার্কিট হাউসপাড়ার বাসিন্দা ফারহানার গায়ে হলুদ ছিল গত ১৩ আগস্ট। মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তিনি সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁর মোটরসাইকেল চালানোর সেই ছবি ও ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফির সঙ্গে বিয়ে হয় ফারহানার। রাফি পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি গাজীপুরে থাকেন।
ফারহানার বাইক চালানো শুরু ২০০৭ সাল থেকেই। নিজে যেহেতু বাইক চালাতে পারেন, তাই গায়ে হলুদের দিনটিকে একটু ব্যতিক্রমীভাবে উদযাপনের ইচ্ছা তৈরি হয় তাঁর মধ্যে। তিনি নিজেই বন্ধুদের নিয়ে এ পরিকল্পনা করেন। এ ছাড়া হলুদের অনুষ্ঠান বন্ধুদের সঙ্গে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন ফারহানা।
বাইক চালিয়ে ভাইরাল হওয়া ছাড়াও আরো এক পরিচয় আছে ফারহানার। তিনি একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা ববিতা, সুচন্দা, চম্পার ভাতিজি।
ফারহানার শ্বশুর আবদুর রশিদ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার পুত্রবধূ ফারহানা মোটরসাইকেল চালাতে পারে। ছেলের সঙ্গেই সে ঢাকা শহরে থাকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফারহানা ঢাকা শহরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। করোনার কারণে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার চাকরিতে যোগ দেবে। ঢাকা শহরের যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য আমি তাঁর পছন্দের নতুন একটি মোটরসাইকেল কিনে দেব। তাঁর মোটরসাইকেল চালানোর অনেক শখ রয়েছে।’
গায়ে হলুদের আসরে পুত্রবধূর মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে আবদুর রশিদ বলেন, ‘ঢাকা শহরে গিয়ে আমি দেখেছি, মোটরবাইক চালিয়ে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা চাকরি ও ব্যবসা করছেন। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। আমার পুত্রবধূও যদি সেটা করে, তাহলে এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি।’
ফারহানা যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আবদুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারহানা। এখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে এইচআরে এমবিএ করছেন তিনি।
ফারহানা বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে বাইক চালাই। মূলত বাড়িতে সাইকেল ও প্রাইভেটকার চালানো শেখা হয় ছোটবেলাতেই। বাবার মোটরসাইকেলটিও চালানোর একটা ঝোঁক ছিল। তাই বাবার অজান্তেই কোনো প্রশিক্ষক ছাড়াই মোটরসাইকেল চালানো শিখি। ২০১৩ সালে ঢাকায় যাওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে বাইক চালিয়ে বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করি। এরপর নিজে স্কুটি কিনি।’
‘বাইক র্যালির ছবি ফেসবুকে আসার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। তারা আমার বাইক চালানোর বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। ফলে তারা ছবি ও ভিডিও দেখে বেশ আনন্দ করেছেন। কিন্তু নেটিজেনরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। তারা আমার চারিত্রিক সনদ দিচ্ছেন। এটা আমি মানতে পারছি না। যে কারণে ছবি ভাইরাল হওয়ার পর আমি নিজেই বাইক র্যালির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করি। সুযোগ পেলে আমি হেলিকপ্টার চালানোও শিখতাম। সবকিছুই চালানো শিখতাম। স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।’
শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি বাইক উপহার পাবেন জানিয়ে ফারহানা বলেন, ‘শ্বশুরের প্রতিশ্রুত মোটরবাইকটি ঢাকা থেকেই কেনার ইচ্ছে আছে।’