সেই মোটরসাইকেলে করেই সুস্থ মাকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন টিটু

Looks like you've blocked notifications!
করোনায় আক্রান্ত মাকে যে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মোটরসাইকেলে করেই সুস্থ মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছেন জিয়াউল হক টিটু। ছবি : সংগৃহীত

নিজের শরীরের সঙ্গে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দ্রুতগতিতে হাসপাতালের দিকে ছুটছিলেন জিয়াউল হাসান টিটু। গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে এই দৃশ্য ধরা পড়ে। আর এই দৃশ্য দেখে পুলিশের চেকপোস্ট থেকে মোটরসাইকেলটিকে অবাধে যেতে দেওয়া হয়। ওই সময় পুলিশের এক সদস্য একটি ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর পরেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।

করোনা মহামারি যেমন মানুষকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তেমনি উঠে এসেছে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা নানা গল্প। আর এমনই এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে বেড়ানো সন্তান যেন শেষমেষ স্বস্তি ফিরে পেলেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ছয়দিন চিকিৎসা শেষে গতকাল শুক্রবার মাকে নিয়ে ঝালকাঠির নলছিটির সূর্যপাশা গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন জিয়াউল হক টিটু।

হাসপাতাল থেকে বের হয়েই মায়ের সঙ্গে ছবি তোলেন দুই ছেলে। মায়ের সুস্থতায় ছেলেরা জয়সূচক চিহ্ন দেখিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাঁদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁরা।

করোনায় আক্রান্ত ওই মায়ের নাম রেহেনা পারভীন (৫৮)। তিনি ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল হাকিম মোল্লার স্ত্রী। রেহেনাকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক জিয়াউল হাসান টিটু তাঁর মেজ ছেলে। বাড়িতে ফেরার সময় তাঁর সঙ্গে অপর একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন বড় ছেলে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মিঠু ও ছোট ছেলে রাকিবুল হাসান ইভান।

হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার সময় রেহেনার সঙ্গে তাঁর দুই ছেলে। ছবি : সংগৃহীত

জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, ‘মাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। অবশেষে ছয়দিন পর মাকে সুস্থ অবস্থায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম। এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে এবং যাঁরা সহযোগিতার জন্য পাশে ছিলেন তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

এদিকে, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেই নামাজ আদায় করেন রেহেনা। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ আমার সন্তানদের প্রতি। তাঁরা আমার শরীরের অবস্থা খারাপ দেখে ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে গেছে। আমি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে পুরো ঘটনা শুনেছি। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্ট দেখেছি। আমি সবার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার ছেলেদের জন্যেও দোয়া চাইছি। আজ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, আমি বেঁচে ফিরে এসেছি, এটাই আনন্দ। আল্লাহর রহমত ছিল। চিকিৎসকদের সেবা এবং দেশের মানুষের দোয়া আমাকে দ্রুত সুস্থ করে দিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা খুবই আন্তরিকভাবে আমাকে সেবা দিয়েছেন।’

রেহেনা আরও বলেন, ‘আমার শরীরে এখন করোনার কোনো উপসর্গ নেই। শনিবার নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাব।’

জিয়াউল হাসান টিটু জানান, গত ৯ এপ্রিল তাঁর মায়ের করোনা শনাক্ত হলে নলছিটির সূর্যপাশা এলাকায় বাড়িতে বসেই চিকিৎসা চলছিল। শনিবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফোন দেওয়া হয়। তখন জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স অন্য রোগী নিয়ে বরিশালে চলে গেছে। লকডাউনের মধ্যে কোনো গাড়ি যখন পাচ্ছিলেন না, তখন সংকটাপন্ন মায়ের জীবন বাঁচাতে মোটরসাইকেলে নিজের শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন টিটু।