‘সেচের পানি না পেয়ে’ বিষপান : আরেক কৃষকের মৃত্যু

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় কীটনাশক পানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষক অভিনাথ মার্ডির মৃত্যুর একদিন পর তাঁর চাচাতো ভাই রবি মার্ডি মারা গেছেন।

গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবি মার্ডির মৃত্যু হয়। বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে না পেরে ক্ষোভে-দুঃখে কীটনাশক পান করেছিলেন বলে তাঁদের পরিবারের দাবি।

এদিকে, আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ এনে গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেছেন নিহত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমরম।

গতকাল সন্ধায় রোজিনা হেমরম গোদাগাড়ী থানায় যখন মামলা করতে যান, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, জেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম তোতা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়সহ নিহত অভিনাথের পরিবারের সদস্যেরা।

সাখাওয়াতের শাস্তি দাবি করেছেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়। আর, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘সেচের পানি না পেয়ে দুজন কৃষকের আত্মহত্যা করাটা অত্যন্ত মর্মান্তিক।’

অভিযোগ উঠেছে, গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাইবটতলা নিমঘুটু গ্রামের অভিনাথ মার্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মার্ডি বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি নিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের কাছে যান। তিনি সেদিন পানি দিতে অস্বীকার করলে ক্ষোভে-দুঃখে অভিনাথ ও রবি কীটনাশক পান করেন। এদের মধ্যে অভিনাথ মার্ডি রাতে বাড়িতে মারা যায়।

আর, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রবি মার্ডিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত অভিনাথ ও রবির চাচাতো ভাই বাপ্পি মার্ডি বলেন, ‘অভিনাথ ও রবি ঈশ্বরীপুর মাঠে ধানের জমিতে পানি দেওয়ার জন্য গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের কাছে ১২ থেকে ১৪ দিন ধরে ঘুরছিলেন। এরপরও তাঁরা পানির জন্য সিরিয়াল পাননি। এরই মধ্যে জমির পানি শুকিয়ে ধানের জমি সাদা হয়ে যায়। গত বুধবার বিকেলে পুনরায় অপারেটরকে পানির জন্য বলেন তাঁরা। এরপরও পানি না দিলে অভিমানে গভীর নলকুপের পাশে অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি বিষপান করেন।’

তবে স্থানীয় দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—বোরো ধানের খেতে পানি দিতে না পারায় অভিনাথ ও রবি বিষ খেয়ে মারা গেছে। এখন খরা মৌসুম। জমিতে পানি বেশি লাগছে। সবাই সিরিয়াল অনুযায়ী পানি পাচ্ছে।’

এদিকে, ঘটনার পরদিন গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘অভিনাথ ও রবি তাঁদের জমিতে ১২ থেকে ১৪ দিন পানি পাননি, এ কথা সত্য নয়। দুদিন আগেই জমিতে পানি দেওয়া হয়েছে। এটা তদন্ত করলেই পাওয়া যাবে।’ বুধবার অতিরিক্ত মদ পান করে অভিনাথ ও রবি আবারও পানি নিতে এসেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই গভীর নলকূপের অধীনে ১৭০ জন কৃষকের ২৬৫ বিঘা জমি রয়েছে। সিরিয়াল অনুযায়ী পানি দিতে হয়। খরা মৌসুমে সিরিয়াল পেতে দেরি হয়। দুদিন আগে অভিনাথ ও রবির জমিতে পানি দেওয়া হয়েছে। খরার কারণে পানি শুকিয়ে গেছে। বুধবার বিকেলে গিয়ে তাঁরা আবার জমিতে পানি চান।’

ওসি বলেন, ‘অভিনাথের মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণা এনে মামলা হয়েছে। তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্ররোচণাকারী সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’