স্কুল-কলেজে নিয়োগে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় : টিআইবি
দেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে পদে পদে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেন হয়। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি এই টাকা নেয়।
আজ বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি অনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন, টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ম্যানেজার তাসলিমা আক্তার হেনা এবং গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেন একই বিভাগের প্রাক্তন সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া ও বর্তমান সিনিয়র ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশ করা সহকারী শিক্ষকদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এ টাকা দিতে হয় প্রধান শিক্ষক বা পরিচালনা কমিটিকে।
শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষার কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষকের এক মাসের এমপিওর টাকা দিতে হয়। এ টাকা দিতে হয় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সংশ্লিষ্ট কমর্কতাদের।
আর শিক্ষক বদলিতে এক থেকে দুই লাখ টাকা দিতে হয়। এ টাকা দিতে হয় মধ্যস্বত্বভোগী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। আর প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতির জন্য এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ এবং স্বীকৃতি প্রদানে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে হয় নিয়মের বাইরে। এর মানে, প্রচলিত অর্থে এগুলো ঘুষ।
প্রতিবেদনে মাধ্যমিক শিক্ষায় নানা ধরনের অনিয়ম, সীমাবদ্ধ ও ভালো–মন্দের চিত্র তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে করণীয় নির্ধারণে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি গুণগত গবেষণা। বেশির ভাগ তথ্যদাতা এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। টিআইবি আশা করছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ গবেষণার সুপারিশগুলোর বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বা বদলির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে অন্তত চারটি স্থানে ‘হাদিয়া বা সম্মানী’ দিয়ে নথি অগ্রায়ন করাতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএমসি/গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমোদনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের পাশাপাশি নিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার ও অন্যান্য একাডেমিক সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে, বিভিন্ন পর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। খোদ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৫৭৭ জন শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার ও অন্যান্য একাডেমিক সনদ ইত্যাদি জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে।