স্ত্রী-সন্তানের কাছে পৌঁছার আগেই লাশ হলেন ছাত্রদল নেতা ইউসুফ

Looks like you've blocked notifications!
মেয়ের সঙ্গে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ। ছবি : সংগৃহীত

স্ত্রী ও শিশু মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফের (৩২)। স্ত্রী-মেয়ের কাছে পৌঁছানোর আগেই তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ইউসুফকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁর পরিবার। শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে তার এলাকার মানুষও।

নিহত ইউসুফ হবিগঞ্জ পৌরসভার আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান আলীর ছেলে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আনোয়ারপুর গ্রামের আবদুল আহাদ জানান, তাঁর চাচাতো ভাই আলী মোহাম্মদ ইউসুফ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ম্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে স্থানীয় লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেনে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী চিশতিয়া বেগম চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী ও দেড় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে ইশা আক্তারকে বাড়িতে আনতে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরী জানান, নিহত আলী মোহাম্মদ ইউসুফ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। তাঁর বাবা মারা গেছেন ২০১১ সালে। আর বড় ভাই উসমান গনি ২০১৭ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ইউসুফই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।

‘অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিলেন ইউসুফ। বাবা ও ভাই না থাকার কারণে তিনিই পরিবারের হাল ধরেছিলেন। তাঁর একমাত্র ছোট ভাই আমজাদ আলী পড়ছেন বিএ।’ বলছিলেন রুবেল।

ইউসুফের প্রতিবেশী মো. জয়নাল মিয়া জানান, কয়েক বছর আগে ইউসুফ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও গ্রামের চিশতিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে চাকরি করছেন। তাদের দেড় বছর বয়সী একটি সন্তানও রয়েছে। নাম ইশা বেগম।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে সাতজনের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। নিহতদের পরিবারে চলছে শোক। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

নিহত সাতজন হলেন হবিগঞ্জ শহরতলীর বড় বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত (১২), আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়ার আড়াই বছরের মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা ওরফে ছোঁয়ামণি ও মদনমুরত গ্রামের আল-আমিন (৩০), চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল মিয়া তালুকদার (২০), মিরাশী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৩০) ও একই উপজেলার আহমদাবাদ গ্রামের পিয়ারা বেগম (৩২)। তাঁরা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিবের শোকবার্তা

আজ এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে হবিগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মো. ইউসুফের মৃত্যুর খবরে তার নিকটজনদের ন্যায় আমিও গভীরভাবে সমব্যথী। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের নীতি ও আদর্শ এবং জাতীয়তাবাদী দর্শনে গভীরভাবে আস্থাশীল মরহুম আলী মো. ইউসুফ হবিগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যে ক্ষতি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আন্দোলন সংগ্রামে তার সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা স্থানীয় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সবসময় অনুপ্রাণিত করবে। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আলামীন যেন মরহুম আলী মো. ইউসুফকে বেহেস্ত নসিব এবং গভীর শোকে ম্রীয়মাণ পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।’

বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।