স্বজনরা নয়, শেষ বিদায়ে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবীরা

Looks like you've blocked notifications!
খাগড়াছড়িতে করোনায় মৃত বলে পাশে আসেনি পারমিতা চাকমার স্বজনরা কিন্তু তার লাশ নিয়ে সৎকারকাজ করতে যাচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। ছবি : এনটিভি

খাগড়াছড়ি সদরের দক্ষিণ খবংপড়িয়ার বাসিন্দা ও শিশুকল্যাণ সংঘ আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারমিতা চাকমার (৫৫)  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেশীদের কেউ এগিয়ে না আসায় খবর দেওয়া হয় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের খাগড়াছড়ির স্বেচ্ছাসেবী দলকে।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ আগস্ট রাত ২টার দিকে মারা যান পারমিতা চাকমা। তাঁর আত্মীয়- স্বজনরা হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যান বাড়িতে। সৎকার করার জন্য খবর দেওয়া হয় প্রতিবেশী ও সমাজের লোকজনকে। কিন্তু করোনায় মৃত্যু হয়েছে জেনে ভয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে বিপাকে পড়ে স্বজনরা।

পরে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নুপুর কান্তি দাশের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় মৃতের আত্মীয় শাশ্বতী দেওয়ান যোগাযোগ করেন  কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়ির স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে। ওই ফাউন্ডেশনের দলনেতা বাবু অংক্যমং মারমার নেতৃত্বে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়ির স্বেচ্ছাসেবীরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মরদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

গতকাল দুপুরের পর স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় সৎকার সম্পন্ন করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, এই কাজটি ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। প্রথমে মরদেহ নিয়ে আধা-কিলোমিটার পথ পায়ে হাঁটতে হয়েছে। তারপর মরদেহ নিয়ে নৌকায় করে নদী পার হয়ে আরও ১৫ থেকে ২০ মিনিট নদীর ধারঘেঁষে কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল পথে হেঁটে শ্মাশানে নিতে হয়েছে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা কাজটি করেছেন আপনজনের মমতায় ও ধৈর্যের সঙ্গে।

স্বেচ্ছাসেবী দলটির সেবক মো. রাশেদুর রহমান, গুইমারা সরকারি কলেজের প্রভাষক টিপু লালনাথ, কুমিল্লা টিলা আইডিয়াল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক অরিন্দম কৃষ্ণ দে শাওন, ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন ও কামরুল হাসান ইশতিয়াক বলেন, একজন মৃতকে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো আমাদের সামাজিক দায়িত্বের অংশ। এই সামাজিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ায় আমরা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। মৃতের আত্মীয় শাশ্বতী দেওয়ান ও রিপুল চাকমা করোনা মহামারিকালীন এই সহযোগিতার জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, গত বছর থেকেই করোনায় মৃতদেহ সারা দেশে দাফন বা সৎকারে সেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দেড় হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবী। এখন পর্যন্ত ৫৯৬৪টি মৃতদেহের স্ব-স্ব ধর্মীয় মর্যাদায় মমতার পরশে শেষ বিদায় সেবা দেওয়া হয়েছে।