স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

Looks like you've blocked notifications!
আজ শুক্রবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : এনটিভি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের ও সম্মানের। কারণ ১৯৭১ সালে মার্চের এই দিনের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।’

‘কিন্তু এই স্বাধীনতা একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, অর্থাৎ স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে’, যোগ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।

আজ শুক্রবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সময় মঞ্চে ছিলেন অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়া আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।’

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। আমি আশা করি, অচিরেই অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যুরও সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভারতের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গৌরব ও ত্যাগের অনুপম বীরত্বগাঁথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনকারী জাতি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই।’

জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব- মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সবাই চাওয়া-পাওয়া- উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোলমডেল। এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি স্তরে নীতি-নৈতিকতা গড়ে তুলতে হবে। দেশ গঠনে শুধু সরকারকেই নয় সর্বস্তরের নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।'

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, বিশ্ববন্ধু হয়ে ওঠেছিলেন। তিনি ছিলেন শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের বন্ধু।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের এক কোটি মানুষকে সেদেশের আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করেছে। আমরা ভারতের কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ।'