স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস : সিআইডি
সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই ঘটেছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে সিআইডি এমন দাবি করল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস।
এ সময় জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন- জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু ও সামিউল জাফর সিটু।
গ্রেপ্তারের সময় প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূলহোতা জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে সিআইডি।
সুমন কুমার দাস বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসিম মিলে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রটির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার জোরে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এ ঘটনায় করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। যার মধ্যে গ্রেপ্তার ছিল ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। গত ১৯ জুলাই পুলিশ এস এম সানোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সুমন কুমার আরো বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে সানোয়ার হোসেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডির একটি দল ওই দিনই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্না, পারভেজ খান ও জাকির হাসান দিপুকে গ্রেপ্তার করে। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করত।’
সিআইডি আরো জানায়, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ২০ জুলাই এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সিআইডি। এরমধ্যে ‘মাস্টারমাইন্ড’ জসিম উদ্দিন ভুঁইয়াসহ চক্রের ১১ সদস্য সিআইডির সাইবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ ছাড়া অধিদপ্তরের ক্ষমতাবান কর্তাদের মদদে প্রেস থেকে বহু বছর ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। তার খালাতো ভাই জসিমের কাজ ছিল সারাদেশে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়া।