স্মৃতির মিনারে জাতির শ্রদ্ধা

Looks like you've blocked notifications!

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে পাওয়া রাষ্ট্রভাষাপ্রাপ্তির দিন, মহান শহীদ দিবস। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর জব্বারসহ অনেকে। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল মায়ের ভাষা, বাঙালি জেনেছিল তাদের বর্ণমালা এখন কেবলই তাদের একান্ত, যা কেড়ে নিতে পারবে না শাসকেরা। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। কানে যে গানই বাজুক, সবার মনে বাজছে একুশের অমরসংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।’

একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে একে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিরোধীদলীয় নেতার পর তিন বাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পরে পর্যায়ক্রমে কূটনীতিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় শহীদ মিনারে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় ১৪ দলের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।

আজ সরকারি ছুটির দিন। অর্ধনমিত রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা শুরু হয়েছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়।

২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বিশ্বের সব জাতিসত্তার ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নেয় ১৯৫২ সালের বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের দিনটি, সেই একুশে ফেব্রুয়ারি। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য সাধারণ অর্জন।

একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে, খালি পায়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই শামিল হতে শুরু করেন শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশের স্কুল-কলেজ, জেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দেশের সর্বস্তরের মানুষ।