হজের নিবন্ধনে বিলম্ব করলে সমস্যা হতে পারে : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে কেউ হজের নিবন্ধনে বিলম্ব করলে তাঁর হজযাত্রায় সমস্যা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হজে যাওয়ার বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। হজে যেতে নিবন্ধন সংখ্যা এখনো কম। কারণ আপনারা ভীত অবস্থায় আছেন। আপনাদের জমাকৃত টাকা কোনোভাবেই মার যাবে না। যখনই টাকা ফেরত চান, ফেরত পাবেন। আপনি চাইলে এই টাকা দিয়ে আগামী বছর হজে যেতে পারবেন। যেকোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
আজ রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা উদ্বিগ্ন হবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। নির্ধারিত সময় ১৫ মার্চের মধ্যেই যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করুন। আপনাদের শঙ্কা, ভীত অবস্থা দূর করার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। তারা সারা বিশ্বের সব হাজির জন্য একই চিন্তা করছে, সবাই যেন হজে যেতে পারেন।’
শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আরো বলেন, ‘আপনাদের কারো টাকা নষ্ট হবে না, এ ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যখনই হজ হবে, আপনারা যেতে পারবেন। বিলম্ব হলে যখনই টাকা ফেরত চাইবেন, তখন সরকারি-বেসরকারিভাবে সবাই টাকা ফেরত পাবেন। সেই টাকায় পরে যেতে চাইলে যেতে পারবেন। সৌদি আরবও একই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
‘সৌদি সরকার সাময়িক সময়ের জন্য ওমরাহ বন্ধ রেখেছে। যেকোনো সময় এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। সে জন্য আপনারা হজের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকুন, যাতে হজে যেতে সমস্যা না হয়।’
প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর শতাধিক দেশ সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সৌদি আরব সতর্কতামূলকভাবে ওমরাহ ভিসা ইস্যুকরণ সাময়িক বন্ধ রেখেছে।
সৌদি সরকারের সময়োপযোগী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র হজের সময়ের আগেই বিশ্ববাসীকে এ বিপদ থেকে অচিরেই রক্ষা করবেন।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধনের পরই সৌদি আরবে মুয়াল্লিম নির্ধারণ, মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করা, আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানোর জন্য সৌদি আরবে অর্থ প্রেরণের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এর প্রতিটি কাজই সময়সাপেক্ষ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে না পারলে একজন হজযাত্রীর হজে গমন সম্ভব নয়। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৌদি আরবের পক্ষ থেকে আমাদের সব সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার হজের প্রাকনিবন্ধনের সংখ্যা কম জানিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওমরাহ হজের কারণে সৌদির ভিসা বন্ধের জন্য আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যাঁরা গ্রামে বাস করেন, তাঁদের আতঙ্কিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। ইতোমধ্যে সৌদির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। সৌদি সরকার বলেছে, করোনার কারণে যে স্থগিত আদেশ রয়েছে, তা যেকোনো সময় উঠে যাবে। যাঁরা ওমরাহ করতে চান, তাঁরা স্থগিতাদেশ উঠে গেলে হজ করতে পারবেন। কোনোভাবেই শঙ্কিত হয়ে হজের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কারণ নেই।’
সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৭২৫ জন এবং বেসরকারিভাবে ৮৪৮ জন নিবন্ধন করেছেন বলে শেখ আবদুল্লাহ জানান। নিবন্ধনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সময় বাড়ানো হবে বলেও তিনি এ সময় জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৯ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি অনুযায়ী ৩০ জুলাই এ বছরের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি ১ জিলকদ (২৩ জুন) হজ ফ্লাইট শুরু হবে। সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি করেছে। সে হিসাবে এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজারসহ মোট এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন।