হতদরিদ্ররা ত্রাণের জন্য ছুটছেন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে

Looks like you've blocked notifications!
ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায়। ছবি : এনটিভি

ঘরে খাবার নেই। পাচ্ছেন না কোনো সাহায্য। তাই ছুটে এসেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ত্রাণের জন্য। 

 

কার্যালয়ের সামনে কথা হয় শহরের পৌর এলাকার আদর্শনগর ২ নম্বর হাবেলী গোপালপুর এলাকার কয়েকজন হতদরিদ্র নারীর  সঙ্গে। একজন বললেন, ‘বাবা বুঝেন তো পেট। সে তো কোনো কথা মানছে না। আমরা তো আর এখন পারছি না বাবা। কী করব, কোনো সহায়তা না পেয়ে ছুটে এসেছি পুলিশের কাছে, যদি কোনো ত্রাণ পাওয়া যায়। গত কয়েক দিন একবেলা কোনো সময়ে না খেয়ে সময় কাটছে আমাদের।’      

বর্তমান বিশ্বের আলোচিত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে জরুরি সার্ভিস ছাড়া সবকিছু বন্ধ রয়েছে। তেমনিভাবে ফরিদপুরেও বন্ধ রয়েছে জরুরি সেবা ও  নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া সবকিছু। এ ব্যাপারে ফরিদপুর প্রশাসনের রয়েছে করা হুঁশিয়ারি।

এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তাদের যেন না খেয়ে থাকতে হয়, সে জন্য সরকারিভাবে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বিভিন্ন মহল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দল-মত-জাতি সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তবে এই নির্দেশনা অনেকে না মানার কারণে হতদরিদ্ররা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সাহায্যের জন্য লাইন দিচ্ছে। এতে অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, মুখ চিনে চিনে সাহায্য দেওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। প্রকৃত হতদরিদ্রদের দিলে এমনটা হতো না।

শহরের পৌর এলাকার আদর্শনগর ২ নম্বর হাবেলী গোপালপুর এলাকার হতদরিদ্ররা আক্ষেপ করে বলেছেন, তাঁরা কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মুখ চিনে চিনে ত্রাণ দিচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পাত্তা দিচ্ছে না।  আর এ কারণেই তাঁরা সাহায্যের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে এসেছেন। 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ত্রাণ পাওয়া এক নারী। ছবি : এনটিভি

পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে মমো বেগম, নূরজাহান বেগম, ও রুপা বেগম জানান, তাঁরা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে এসেছেন। তবে এখনো কোনো সহযোগিতা পাননি। 

ফরিদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. সাইফুজ্জামানের কাছে দিনমজুর নারী-পুরুষরা গিয়ে মানবিক সহায়তা পেতে আবেদন জানাচ্ছেন। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে তো কোনো সরকারি মানবিক সহায়তা আসে না। তবে আমাদের পুলিশ সদস্যরা মাসের বেতন থেকে অর্থ সংগ্রহ করে কিছু কিছু করে সহযোগিতা করেছি। একটি ফান্ড তৈরি করে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ লোককে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের সরকারি নম্বরে অনেকে এসএমএস দিয়েছে নাম-ঠিকানাসহ মানবিক সহায়তার জন্য। জেলার কোতোয়ালি থানা এলাকার মাচ্চর, শিবরামপুর, পৌর এলাকার ভাটি লক্ষ্মীপুর, কোর্টপাড় এ রকম বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসএমএস করে আসছে মানবিক সহায়তা পেতে। এদের মধ্যে অনেকেই আছে মধ্যবিত্ত পরিবারের। বিভিন্ন পেশার মানুষও রয়েছে, শিক্ষকতা পেশার মানুষ আছে। অনেকেই এলাকায় চক্ষুলজ্জার কারণে বলতে পারছে না স্থানীয়দের কাছে। বর্তমানে ফরিদপুর পুলিশ প্রশাসন মানুষের বিপদেও বন্ধু হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বিধায় সাধারণ মানুষ তাদের আর্থিক কষ্টের কথা আমাদের কাছে জানাচ্ছে।’

সাইফুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের কাছে ত্রাণের কোনো ফান্ড না থাকলেও হতদরিদ্ররা অফিসে এসে ভিড় করে যাচ্ছে। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মানাবিক সহায়তার ফান্ড তৈরি করে সহযোগিতা করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এটা তো আর ব্যাপক পরিসরে করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ 

রিজার্ভ অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে কেউ এলে প্রথমে তার নাম-পরিচয় লিখে রাখি। তারপর খোঁজখবর নিয়ে মানবিক সহায়তা হিসেবে কিছু ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসা হয়। তবে সেটা তো আর আমাদের ব্যাপক পর্যায়ে করা সম্ভব হয় না।’