হত্যার বিচার চেয়ে ভোলায় আ. রহিমের মরদেহ দাফন
ভোলায় গতকাল রোববার নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আজ সোমবার দুপুরে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে দুপুর ২টায় শহরের গোরস্তান মাদ্রাসার মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজে শেষে আব্দুর রহিমের মরদেহ ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা জানাজা ও মরদেহ দাফনে অংশ নেন। তবে পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী জানাজায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আ. রহিমের লাশ পেতে ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে তাঁর মা, স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনরা অপেক্ষায় ছিল। আজ সকালে মর্গের সামনে গেলে লাশ দেখতে না দেওয়ায় চরম ক্ষোভ আর আহাজারি করতে দেখা গেছে স্বজনদের। এ সময় চার সন্তানের জনক নিহত আ. রহিমের মা বিলাপ করে মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন সন্তানের লাশ দেখতে না দেওয়ায়।
একপর্যায়ে তার মেয়ে তাকে কিছুটা সুস্থ করে তুললে তিনি বলেন, আমার সন্তান কী অপরাধ করেছে। কেন তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করা হলো। আমি হত্যার বিচার চাই। সন্তান হত্যার বিচার চাই।
পাশে থাকা আব্দুর রহিমের স্ত্রী চার সন্তানের জননী খাদিজা বলেন, আমার স্বামী কী দোষ করেছে। তাকে কেন নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হলো। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব, কী করব। হত্যাকারীদের বিচার চাই। স্বামী হত্যার বিচার চাই আমি। যারা আমাকে বিধবা বানিয়েছে, আল্লাহ যেন ওদের স্ত্রীদের বিধবা আর সন্তানদের এতিম করে। একইভাবে হত্যার বিচার চায় নিহত আ. রহিমের ছেলে মো. ইয়াছিন ও মেয়ে জান্নাত।
এ সময় নিহত আব্দুর রহিমের স্ত্রী, বোন ও বড় ছেলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে হত্যার নির্মমতা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে বিচার দাবি করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে আ. রহিমের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ভাই আব্দুর রাজ্জাকসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি নিহত রহিমের স্বজনদের সমবেদনা জানিয়ে এ হত্যার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে নিহত আ. রহিমের স্বজনরাও হত্যার বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুমেনসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশ সদর থানায় দুটি মামলা করেছে।
গতকাল রোববার দিনগত রাতে এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জসিম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। একটি পুলিশের ওপর হামলা অপরটি হত্যা মামলা। পুলিশ পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটিতে ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, যারা পুলিশের কাজে বাধা দিয়ে তাদের ওপর হামলা করেছিল, তাদেরই আসামি করা হয়েছে।