হত্যা হয়েছে, জড়িত প্রত্যেকে আসবে আইনের আওতায়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, হাশেম ফুডস লিমিটেড ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আবুল হাশেমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় যাদের গাফিলতি আছে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় হাশেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, একটা দুর্ঘটনা হয়েছে, একটা হত্যা হয়েছে। এখানে অনেকগুলো মানুষ মারা গেছে। এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী মামলা হয়েছে। এখন মামলার তদন্ত হবে। যারা দোষী এবং এ ঘটনার সঙ্গে যাদের সামান্যতম অবহেলা রয়েছে বলে প্রমাণিত হবে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ঘটনার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা হৃদয় বিদারক ও দুঃখজনক। এ ঘটনায় সারা দেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। একসঙ্গে এতজন লোকের প্রাণহানিতে সারা দেশে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রথমে দেখলাম তিনজন, পরবর্তীতে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কিছু জীবিত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ কারখানায় কতজন লোক কাজ করছিল, সেটা তদন্তে বের হয়ে আসবে। জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের পরেই আমরা বলতে পারব এখানে কেন এ ঘটনা ঘটেছে। যাই ঘটুক তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক। যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। যে কয়জন হাসপাতালে জীবিত আছেন আমরা মনে করি তারা সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। আত্মীয়-স্বজনকে যেন আল্লাহ শোক সহ্য করতে দেয় এ কামনা করি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রূপগঞ্জের ভুলতায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের হাশেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগার পর পরই গোটা ভবনে লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেমসহ আট শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জায়েদুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবুল হাশেমের চার ছেলে হাসিব বিন হাশেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীমও রয়েছেন। অন্য তিনজন হলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, হাশেম ফুডস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদ ও প্রশাসনিক প্রধান সালাউদ্দিন।
সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি
কারখানায় এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি চাইলে আরও লোক নিতে পারবে। যদি তাঁরা মনে করেন, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লোক নেবেন, নিতে পারবেন।’
নিহতের পরিবার পাবে দুই লাখ টাকা
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে শ্রম কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দুই লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।