হাতিরঝিলের ক্যানসারখ্যাত বিজিএমইএ ভবন ভাঙা শুরু
আদালতের রায়ের পর বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর অবশেষে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা শুরু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ সময় ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজউক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ‘ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ।
পরে রাজউক ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বানের পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পায় ‘সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। ওই সময় সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেয় রাজউক। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফোর স্টার’ গ্রুপকে কাজ দেয় রাজউক। তাদের দরপত্রে টাকার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এখন তারা এক কোটি দুই লাখ টাকায় ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করবে।
১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৬ তলা এই ভবনটির উদ্বোধন হয় ২০০৬ সালে। একসময়কার বেগুনবাড়ী খাল-বর্তমানে হাতিরঝিলে, জমির স্বত্ব না থাকা এবং জলাধার আইন লঙ্ঘন করে নির্মাণ করায় ২০১১ সালে বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার দাবিতে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। এমনকি ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভবনটিকে হাতিরঝিলের বিষফোড়া হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
বিজিএমইএ ভবনে সর্বশেষ প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল। গত বছরের মাঝামাঝিতে এই ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এসব অফিস। আর উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে নির্মাণাধীন নতুন বিজিএমইএ ভবনে সরানো হয়েছে সংগঠনটির অফিস। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ওই ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পর থেকে পুরোনো ভবনটি সিলগালা করে রেখেছিল রাজউক। নানা প্রক্রিয়া শেষে বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার কাজ আজ শুরু হলো।