হাত হারিয়ে পা দিয়ে লিখেই জিপিএ ৫

Looks like you've blocked notifications!
পা দিয়ে লিখেই এবার পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে বরিশালের মুক্তামনি। ছবি : সংগৃহীত

দুটি হাত না থাকার পরও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে বরিশালের মুক্তামনি (১২)। শুধু পরিবার নয়, বরিশালের হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও মুক্তাকে নিয়ে এ বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা খানম বলেন, ‘অবশেষে স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিয়েছে। মুক্তামনি পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। আমরা আশাকরি সামনের দিনগুলো তার আরো ভালোভাবে কাটবে এবং ভবিষ্যৎ তার উজ্জ্বল হবে।’

নাছিমা খানম বলেন, ফলাফল পাওয়ার পর মুক্তামনি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে রেজাল্ট ভালো করে খুশি। এখন বৃত্তি পাওয়ার আশায় রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক বলেন, মুক্তামনির পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুইদিন পর তার দাদি মারা যাওয়ায় এখন মায়ের সঙ্গে ঢাকায় রয়েছে। সেখানে সাভারের একটি স্কুলেও ভর্তি হয়েছে।

পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার ১৪ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিয়েছে। এদের মধ্যে মুক্তামনির দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই লিখে পরীক্ষা দেয় সে। ওর সেই লেখাও অন্যদের হাতের লেখা চেয়ে অনেক সুন্দর। আর একমাত্র মুক্তাই ১৪ জনের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

মুক্তামনির স্বজনরা জানান, শুরুতে সে গ্রামেই থাকতো। মা ঝুমুর বেগমের গার্মেন্টসে চাকরির সূত্রে দুই বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ঢাকার সাভারে যায় সে। সেখানেই একদিন পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক তার চেপে ধরে মুক্তামনি। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হয়। ক্ষত ঠিক না হওয়ায় একপর্যায়ে দুটো হাত পুরোপুরি শরীর থেকে বাদ দিতে হয়।

এরপর পত্তণীভাঙ্গা গ্রামে দাদি জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তা। তার ইচ্ছেতেই ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া ও মা ঝুমুর পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করেন মুক্তামনিকে।

নতুন স্কুলজীবনের শুরু থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। আর এখন হাতে লেখা যে কারো চেয়ে স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে লিখে যেতে পারে সে।

এদিকে মুক্তামনির চিকিৎসা ও সেসহ আরো এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবু মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান মা। মুক্তামনির স্বপ্ন একদিন সে শিক্ষক হবে।

মুক্তামনির স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, মুক্তামনি এতটাই ভালো ছাত্রী যে, সে কখনো বিনা কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনি। সে নিজের যেকোনো সমস্যা খাদিজা বেগম নামের এক শিক্ষিকার সঙ্গে আলোচনা করে নিত।