হারানো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিনব প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১
প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চোখ রাখতেন ফারুক হোসেন ফিটু। নিখোঁজদের সন্ধানে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি খুঁজতেন। বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়লেই ঠিকানা ও জিডির নম্বর সংগ্রহ করে নিজেকে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয় দিতেন। এরপর চলতো নিখোঁজদের সন্ধান চাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পালা। সব টাকা তিনি নিতেন বিকাশের মাধ্যমে।
গত চার বছর ধরে এভাবে শত শত মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্ত ফারুক হোসেন ফিটু। এজন্য তিনি ব্যবহার করতেন ১৬টি মোবাইল ও ২৪টি সিম। সব সিম ও বিকাশ নম্বর রেজিস্ট্রেশনে তিনি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।
এমন অভিনব প্রতারণার দায়ে গতকাল মঙ্গলবার পাবনার আমিনপুর থানার চক আব্দুল শুকুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
অভিযুক্ত ফারুক হোসেন চক আব্দুল শুকুর গ্রামের নাদের শেখের ছেলে। তিনি পাবনা কাজিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখ করেছেন। এরপর ২০০১ সালে ঢাকায় গিয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। এরপর তিন বছর পাবনায় থাকেন। ২০১২ সালে আবার ঢাকায় যান তিনি। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চা বিক্রি করেছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে তিনি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া শুরু করেন ।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজপাড়া থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন যে, রাজপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ আলমের পরিচয় দিয়ে চারটি মোবাইল নম্বর থেকে নগরীর ডাবতলা এলাকার তিনজনকে ফোন করা হয়। হারানো বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি তদন্ত, উদ্ধার ও ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য টাকা দাবি করেন পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি।
পরে তারা থানায় অভিযোগ করলে দেখা যায়, রাজপাড়া থানার এসআই মাসুদ বা অন্য কেউ বিষয়টি জানেনই না। তখন রাজপাড়া থানা পুলিশ মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে নম্বরগুলো পাঠিয়ে দেয়। ২১ দিন বিশ্লেষণ করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে। এরপর তাঁকে পাবনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযুক্ত ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তারে পর আজ বুধবার দুপুরে আরএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল কুমার চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ফারুক হোসেন কয়েক বছর ধরে পুলিশের ওসি ও এসআই পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০ জনের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আরো তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’