হেনা হলেন সেলিম, স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে ফেরায় চাঞ্চল্য

Looks like you've blocked notifications!
মাদারীপুরের শিবচরে মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হওয়া সেলিম রেজা। ছবি : এনটিভি

১৫ বছর আগে সেরেলা আক্তার হেনা যখন মা-বাবার সঙ্গে গ্রাম ছাড়েন তখন ছিলেন টগবগে কিশোরী। গ্রামের মানুষজন তাকে সেভাবেই চিনত। কিন্তু ১৫ বছর বাদে ‘সেই হেনাকে’ দেখে গ্রামবাসী একেবারে চমকে গেছেন, যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না। কিশোরী হেনা আর নারী নেই; লিঙ্গ রূপান্তরের ফলে তিনি হয়ে গেছেন পুরুষ। তাঁর নাম এখন সেলিম রেজা। বিয়েও করেছেন, আছে সন্তানও।      

নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হওয়া সেলিম রেজা প্রায় ১৫ বছর পর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ফিরেছেন। তাঁকে দেখতে এলাকার শত শত মানুষ ভিড় করছেন।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের চর কামারকান্দি গ্রামের সেকান্দার খানের মেয়ে সেরেলা আক্তার হেনা। তিনি প্রায় ১৫ বছর আগে মা-বাবার সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে বসবাস শুরু করেন। ঢাকায় তিনি পল্লী চিকিৎসক কোর্স সম্পন্ন করেন।

প্রায় আট বছর আগে সেরেলা আক্তার হেনা তাঁর নিজের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। তাঁর মধ্যে পুরুষালী পরিবর্তন দেখে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক তাঁকে জানান, হরমোনজনিত কারণে এই সমস্যা হয়েছে। এরপর ওষুধ খাওয়া শুরু করলেও ধীরে ধীরে তিনি সম্পূর্ণ একজন পুরুষে রূপান্তরিত হয়ে যান। এ অবস্থায় তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে সেলিম রেজা রাখেন এবং বিয়ে করেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৩০ বছর। তাঁর একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে সেলিম তাঁর স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি চরকামারকান্দি আসেন। তাঁর আসার সংবাদ পেয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে একনজর দেখতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎসুক মানুষ বাড়িতে ভিড় করছেন।

প্রতিবেশী আসমা বেগম বলেন, ‘সেলিম আগে মেয়ে ছিল। নাম ছিল হেনা। আমাকে নানি বলে ডাকত। ঢাকা যাওয়ার পর সেখানেই ওর শারীরিক পরিবর্তন হয়। ও বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কয়েকদিন হলো গ্রামে এসেছে।’

প্রতিবেশী আলম খান বলেন, ‘‘ওরা ঢাকা থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করত। ও মেয়ে থেকে পুরুষে রূপান্তর হওয়ার খবর আমাকে জানিয়ে বলেছিল, ‘চাচা, আল্লাহ যেহেতু আমাকে মেয়ে থেকে পুরুষ বানিয়ে দিয়েছেন তাহলে আর ঢাকা থাকব না। গ্রামে এসে প্রয়োজনে দিনমজুরি করে বাবা-মায়ের দেখাশোনা করব।’’

পাশের গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, ‘একটি মেয়ে ছেলে হয়ে গেছে শুনে তাঁকে দেখতে এসেছি। তাঁর কণ্ঠ শুধু মেয়ের মতো। চলাফেরা পুরুষের মতোই। আবার তাঁর স্ত্রী ও সন্তান দেখলাম। সত্যিই এটা অবাক করা ব্যাপার। আমার মতো অনেক মানুষ তাঁকে দেখতে আসছে।’

পুরুষে রূপান্তরিত সেলিম রেজা বলেন, ‘আমি মেয়ে হয়েই জন্মেছিলাম। তবে যখন থেকে একটু বুঝতে শিখি তখন লক্ষ করতাম অন্য মেয়েদের মতো আমার মেয়েলি পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রায় আট বছর আগে আমার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হলে চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা বলেন এটা হরমোনজনিত সমস্যা। হরমোনজনিত হোক বা যেকোনো রোগের জন্য হোক সৃষ্টিকর্তা আমাকে মেয়ে থেকে সম্পূর্ণ পুরুষে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন। আমি বিয়ে করেছি। আমার একটি ছেলেও রয়েছে। একজন পূর্ণাঙ্গ পুরুষ যেভাবে চলাফেরা করে আমি সেভাবেই চলাফেরা করছি।’