হেফাজতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককে মামলা করার আহ্বান হানিফের
হেফাজতে ইসলামের হামলা, ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতনের শিকার প্রত্যেককে মামলা করার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর যে আঘাত করা হয়েছে, এই আঘাতের প্রতিঘাত করা হবে।’
আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য।
গত শনিবার সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবস্থানের সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে স্থানীয় লোকজন গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় মামুনুল হক যে কক্ষে ছিলেন সেই কক্ষে একজন নারীও ছিলেন। মামুনুল হক দাবি করেন, ওই নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁকে তিনি শরিয়তসম্মতভাবে বিয়ে করেছেন।
সন্ধ্যার দিকে হেফাজতে ইসলামের অনুসারী লোকজন মামুনুল হককে ওই রিসোর্ট থেকে বের করে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধরা রয়েল রিসোর্ট, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে, যাতে মামুনুল হকসহ হেফাজতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
আজ মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একজন ধর্ম ব্যবসায়ীকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। এটাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে, যুবলীগের নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে, ছাত্রলীগের নেতার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, ধর্মব্যবসায়ী মামুনুল হক তাঁর স্ত্রীর নাম দিয়ে এখানে এসেছিলেন এবং অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন বলেই সাধারণ মানুষ তাঁকে ধরেছে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ীরা যে ভাঙচুর ও নির্যাতন করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
হামলার ঘটনায় জড়িত সবার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করেছে, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করেছে, মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে- তাদের পরিচয় সংগ্রহ করুন, বাড়ি-ঠিকানা সংগ্রহ করুন, কে কী ব্যবসা করে সেগুলো সংগ্রহ করুন। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। কিন্তু ধর্মের নাম করে অধর্মের কাজ করা, ভাঙচুর করা বরদাস্ত করা হবে না। এই ঘটনায় জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এবং যারা অধর্মের কাজ করবে, তাদের হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করব। ধর্মের নাম করে যারাই ভাঙচুর করেছে, এদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
হানিফ আরও বলেন, ‘সারা দেশে ধর্মের নাম ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। এখন থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী সরকারের পাশে থেকে এসব অপশক্তিকে কঠোরভাবে দমন করবে। আশা করি, নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হবেন।’
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাকালীন এই দুর্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে এবং মাস্ক পরিধান করে পুরো জাতিকে করোনার সুরক্ষা দিতে হবে। এবং আগামী দিনে সব অপশক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’