হ্যাঁ-না ভোট থেকে নির্বাচনের বিতর্ক শুরু : আমির হোসেন আমু
হ্যাঁ-না ভোট থেকে নির্বাচনের বিতর্ক শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেছেন, এই বিতর্ক শুরু করেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা।
আজ বুধবার রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের তথ্যভবন মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আমু এ কথা বলেন।
অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী। এ সময় এনটিভির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মালিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন এনটিভির অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান মো. গোলাম রওশন ইয়াজদানী, এনটিভির বার্তাপ্রধান জহিরুল আলম, বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান অঞ্জন কুমার কুণ্ডু, আইটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ টি এম আহবাব নেওয়াজ, সিনিয়র টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জুবায়ের মাহমুদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় আমু বলেন, ‘আজকে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক। এই বিতর্ক শুরু হয়েছে কবে থেকে? নির্বাচনে হ্যাঁ-না ভোট থেকে এই বিতর্ক শুরু। এই বিতর্ক শুরু করেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। হত্যার মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাদের সেই অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এই কারচুপি শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই কিন্তু এই ভোটের কারচুপি।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, ‘আজকে হত্যা বলেন, গুম বলেন, যা কিছু; একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে সহপরিবারে হত্যা করা, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের কারাগারের ভেতরে হত্যা, পরবর্তীতে ইনডেমনিটি বিল পাসের মধ্য দিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। আজকে তারা হত্যা-খুন-গুমের কথা বলে।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজকে আমরা কী দেখলাম? আমরা ২১ বছর সব রকম নির্যাতন সহ্য করেছি। হত্যার শিকার হয়েছি। বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় এলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, ২১ দিনব্যাপী আমরা বিজয় উৎসব করব। শেখ হাসিনা বাধ-সাধলেন। তিনি বললেন, না। বিজয় মিছিলই হবে না। আমরা হতবাক, বিজয় মিছিল আমরা করলাম না। তারপর কয়েকজনের সামনে জিজ্ঞেস করলাম, কেন বিজয় মিছিল করলাম না? তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, আপনারা বিজয় মিছিল করতেন ঠিকই। কিন্তু, আপনাদের বিজয় মিছিলে যদি অনুপ্রবেশকারীরা বিএনপির বাসায় বাসায় আগুন দিত, তাদের ওপর হামলা হত, তাহলে আমরা শুরুতেই একটি বদনামের ভাগিদার হতাম। শুরুতেই বিতর্কিত অবস্থা সৃষ্টি হতো। আমি চাই নাই, এ দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হোক। এই ছিল শেখ হাসিনার চিন্তা। যার কারণে তিনি বিজয় মিছিল করতে দেননি। তার পরিবর্তে আমরা কী পেলাম?’
আমু বলেন, ‘আমি তখন জেলে ছিলাম। আমাদের বাসায় রাতে শুধু কান্না, দোয়া-দুরুদ পড়া, আর আল্লাহ আল্লাহ ডাকা হতো। সে সময় কী হতো? জেলে চারজন-ছয়জন করে করে ফাঁসি দিত। নিয়মবর্হিভূত ফাঁসি। এভাবে শুধু ঢাকা জেলে নয়, কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোর জেলসহ প্রত্যেকটি জেলে প্রতিদিন আইনবর্হিভূত ফাঁসি দিত। আড়াই হাজার লোকের তো ফাঁসিই হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের আমলে এবং সব সেনাবাহিনীর লোক। আজকে তারা আইনশৃঙ্খলার কথা বলে। আজকে তারা হত্যা-গুমের কথা বলে। সুতরাং, তাদের কথাগুলোও গণমাধ্যমে আসা উচিত। মানুষের সামনে আসা উচিত।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এ দেশের সব রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করা হলো। এ তো ব্যক্তি শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়নি, পারিবারিক মুজিবকে হত্যা করা হয়নি; হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, হত্যা করা হয়েছে মানুষের আশা আকঙ্ক্ষাকে, হত্যা করা হয়েছে মানুষের বিবেককে। আজকেও পাকিস্তানের প্রেতাত্মা হিসেবে তারা দেশে কাজ করে চলেছে।’
আমু আরও বলেন, ‘আপনাদের (টিভি মালিক পক্ষ) কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আজকে আপনাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা বাস্তবে কী? আমরা কী চায়? আমাদের মূল লক্ষ্য কী? আমাদের নিউজ পরিবেশন সেভাবে হওয়া উচিত।’