১০ কেজির জাপানি মুলা!

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার দরবার শরিফের বার্ষিক ওরস উপলক্ষে বসা মেলায় বিক্রি হয় পাঁচ থেকে দশ কেজি ওজনের জাপানি জাতের মুলা। ছবি : এনটিভি

বছরে একবারই চাষ হয় এই মুলার। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার দরবার শরিফের বার্ষিক ওরস উপলক্ষে বসা মেলায় বিক্রি হয় এসব মুলা। কৃষকরা বলছেন, বিশাল আকৃতির এই মুলা জাপানি জাতের।

এই মুলার বিশেষত্ব হলো এর আকার ও ওজন। বিশাল আকারের এসব মুলার একেকটির ওজন পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কেজি পর্যন্ত হয়।

চলতি বছর ফটিকছড়িতে জাপানি মুলা চাষ বেশ ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাইজভান্ডার দরবারের মেলায় মুলা বিত্রিু করতে আসা কৃষক জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘এই মুলাগুলো চাষ করা হয় হালদা নদীর দুই পাড়ের বালু চরে। নদীর তীরে সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, নাজিরহাটের কিছু এলাকাতেও এর চাষ হয়।’

এবার ফটিকছড়িতে ফলন ভালো হওয়াতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন বিশেষ জাতের এই মুলা। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে এসব মুলা চাষেও আগ্রহ বেড়েছে ফটিকছড়ির কৃষকদের।

দেশ-বিদেশ থেকে আসা ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরিফের আশেক ভক্তদের মধ্যে এ অঞ্চলের মুলার আলাদা কদর রয়েছে। তাই প্রতিবছর কৃষকরা ওরস শরিফের মেলায় এই মুলা বিক্রির আশায় থাকেন।

এ ছাড়া এই জাপানি মুলা চাষ করে অনেক কৃষক পরিবার বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে।

সুয়াবিল থেকে মেলায় মুলা বিক্রি করতে আসা কৃষক শাহ আলম জানান, মুলার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। প্রকারভেদে প্রতি জোড়া মুলার দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো বলেও জানান তিনি।

নাজিরহাট ঝাংকার থেকে শুরু করে মাইজভান্ডার দরবার শরিফ পর্যন্ত বিস্তৃত ওই মেলা। মেলাজুড়েই এই মুলার সরবরাহ ও বিক্রি চোখে পড়ার মতো। এক একটি মুলা দুই থেকে তিন হাত পর্যন্ত লম্বা ও পাঁচ থেকে দশ কেজি ওজনের হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিবিদ মো. গোলাম আজম জানান, মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনি ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলুরুবিন কমিয়ে তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে, যা কি না জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। মুলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং কম ক্যালরিযুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া মুলা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে। সেইসঙ্গে লিভার ও পাকস্থলীর সব দূষণ ও বর্জ্য পরিষ্কার করে থাকে। শ্বেত রোগের চিকিৎসায়ও মুলা দরকারি। অ্যান্টি কারসেনোজিনিক উপাদানসমৃদ্ধ মুলার বীজ আদার রস এবং ভিনেগারে ভিজিয়ে আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। অথবা কাঁচা মুলা চিবিয়ে খেলেও কাজ হবে। জ্বর ও এর কারণে শরীর ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে মুলা।

ত্বক পরিচর্যায়ও মুলা ব্যবহৃত হয়। কারণ, এটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা মুলার পাতলা টুকরো ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ব্রণ নিরাময় হয়। এ ছাড়া কাঁচা মুলা ফেসপ্যাক ও ক্লিন্সার হিসেবেও দারুণ উপকারী।

তবে সতর্কতা হলো, যাদের বুকজ্বলার সমস্যা আছে, তাদের মুলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।