১০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া, ৯৯ টাকায় চাকু
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল শরীফ আহমেদকে (৩৩) ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে হত্যা করেন ভাড়াটে খুনি মাসুদ মিয়া। হত্যার মূল চক্রান্তকারী মোফাজ্জল হোসেন ও মনির হোসেনের নেতৃত্বে মাসুদ কনস্টেবল শরীফকে হত্যা করেন। এই ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১-এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোফাজ্জল হোসেন (২৮), মনির হোসেন (৩০) ও মাসুদ মিয়া (২৫)।
শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘গত ৩ মার্চ দিবাগত রাতে শরীফ আহমেদকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর শরীফের গলাকাটা লাশ গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ৪ নম্বর গেটের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশটি প্রথমে বেওয়ারিশ হিসেবে গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে ১২ মার্চ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাঁর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে মৃতদেহ শনাক্ত করে।’
শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘লাশটি শনাক্ত করে পিবিআই দেখে যে, শরীফ আহমেদ ট্রাফিক পুলিশের একজন কনস্টেবল। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ঝিলকি এলাকার আলাউদ্দিন ফকিরের ছেলে। আলাউদ্দিনও একজন পুলিশ সদস্য। এরপর একই দিনে অর্থাৎ ১২ মার্চ গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লাশ তোলার জন্য আবেদন করা হলে আদালত নির্দেশ দেন। পরে লাশ উত্তোলন করে পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, আসামিরা গাজীপুর মহানগরীর শ্রীপুর থানার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় আত্মগোপনে আছেন। গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করি। গ্রেপ্তারের পর তারা তিনজনই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিকভাবে ঘটনার কথা স্বীকার করে তারা বলেছেন, এক সময় শরীফের মোফাজ্জল ও গাজীপুরের তাকওয়া বাসের চালক মনিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে এই দুজনের সঙ্গে শরীফের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ওই দ্বন্দ্বের জেরে তারা দুজন শরীফকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।’
শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোফাজ্জল ময়মনসিংহে যান। সেখানে গিয়ে শরীফকে খুন করার জন্য মাসুদকে ভাড়া করেন। খুনের জন্য মাসুদের সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। খুন করার আগে মাসুদকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর ৩ মার্চ তাকওয়া বাসের চালক মনির একটা চাকু কেনেন ৯৯ টাকা দিয়ে। ওই দিন রাতে মোফাজ্জল কনস্টেবল শরীফকে কৌশলে ভোগড়া বাইপাস এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাকওয়া নামের একটি পরিবহনে উঠান।’
র্যাব অধিনায়ক বরেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যেই তারা বাসটি ভাড়া করেছিল। পরবর্তী মনির হোসেন বাসটি চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের দিকে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসের দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। চলতে চলতে বাসটি রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে গাজীপুরের হোতাপাড়া যাওয়ার পর চলন্ত বাসের ভেতর মাসুদ প্রথমে কনস্ট্রেবলকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। আঘাতের পর শরীফ পড়ে যান। পরে মোফাজ্জল ও মাসুদ তার হাত-পা বেঁধে ৯৯ টাকা দিয়ে কেনা ছুরি দিয়ে তাকে গলাকেটে জবাই করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শরীফের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা তিনজনে ভাগ করে নেয়। রাত ২টার দিকে বাস চালিয়ে ময়মনসিংহ রোডের ন্যাশনাল পার্কের ৪ নম্বর গেটে গিয়ে বাসটি থামিয়ে লাশটি ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা চাকু টিও রাস্তার পাশে ঝোপে ছুড়ে ফেলে দেয়। এবং হত্যার পর তারা বাসটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন।’