১১ বছরের শিশুকে বেঁধে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
ঝালকাঠির নলছিটিতে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ১১ বছরের এই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ। ছবি : এনটিভি

ঝালকাঠির নলছিটিতে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ১১ বছরের এক শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাতভর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সুপারি চুরির অভিযোগে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ওই শিশুর বাবাকেও একইভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। শিশুটির মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, গতকাল রাত ১১দিকে ওই গ্রামের লতিফ খানের বাড়ির আঙিনায় শুকিয়ে মজুদ করে রাখা ৪২০টি সুপারি চুরি হয়। প্রতিবেশী শিশু সাব্বিরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে এনে তাকে ও তাঁর বাবা মো. বাবুল হাওলাদারকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় লতিফ খানের বাড়িতে। এরপর সেখানে স্থানীয় কয়েকজন মিলে বাড়ির উঠানে আমড়া গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে দুজনকে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। রাত ১২টার দিকে আব্বাস হাওলাদার নামে স্থানীয় এক মাংস বিক্রেতা কাঁচি দিয়ে ওই শিশুর মাথার চুল কেটে দেন। এরপর সারারাত গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় বাপবেটাকে।

আজ সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অবস্থা  বেগতিক  দেখে মুচলেকা নিয়ে বাপ-বেটাকে ছেড়ে দেন লতিফ খান।

ভুক্তভোগী বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘ছেলের বিরুদ্ধে সুপারি চুরির অভিযোগ তুলে সারারাত আমাদের  খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। রাতে শীতে অনেক কষ্ট পেয়েছি আমরা। সকালে একটি সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।’

নির্যাতনের শিকার শিশুর মা শিউলি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ও স্বামীকে রাতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমিও ঘটনাস্থলে যাই। তখন লতিফ খান আমাকে একটি চড় মারেন। আমার স্বামী ও ছেলেকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধরের কারণে তাদের সারা শরীর কালো হয়ে ফুলে গেছে। আমি এ অত্যাচারের বিচার চাই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিউলি আরও বলেন, ‘আমি গরিব, অসহায়। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী বলেন, হাতেনাতে না ধরে এবং কোনো ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই এভাবে চুরির অভিযোগ তুলে বাড়ি থেকে ১১ বছরের শিশু ও তার বাবাকে তুলে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।

তবে লতিফ খান নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সাব্বির সুপারি চুরি করায় তাকে বেঁধে রাখা হয়। তাকে মারধর করা হয়নি। চুরি করার পরও সাব্বিরের বাবা তাঁর ছেলেকে শাসন না করায় তাকেও আনা হয়েছিল।’

এ ব্যাপারে নলছিটি থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমি এখনও জানি না।  অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’