১৫০ কেন্দ্রে ভোট ও পূজা, বাড়তি নিরাপত্তা চায় ইসি
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ও পূজা একই দিনে অনু্ষ্ঠিত হবে। দুই সিটির মোট ১৫০টি ভোট কেন্দ্রের ৮৯৫টি ভোট কক্ষে ভোটাররা তাঁদের ভোট প্রদান করবেন। এসব কেন্দ্রে ভোট ও পূজা একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে ওই সব ভোট কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ শুক্রবার দুইজন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটির ১৫০টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩ জন ভোটার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের তাঁদের ভোট প্রদান করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪৯ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৪ জন।
ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর সিটিতে মোট ৯৪টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৫৫৬টি ভোট কক্ষ রয়েছে। এতে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৫ জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ০৩ হাজার ৭৭৪ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৫ হাজার ১৭১ জন।
দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, দক্ষিণ সিটিতে ৫৬টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩৩০টি ভোট কক্ষ রয়েছে। এতে ১ লাখ ১৭ হাজার ১০৮ জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬২ হাজার ৩৭৮ ও নারী ভোটার ৫৪ হাজার ৭৩০ জন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে,দুই সিটিতে মোট ২২ কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে ৭০ হাজার ৬৪৩ জন নারী ও পুরুষ একই সঙ্গে ভোট দেবেন। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ১৯ কেন্দ্রে ৬৪ হাজার ৩১৮ জন নারী ও পুরুষ ভোটার ভোট দেবেন। ওই ১৯টি কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ৪০ হাজার ৯৪৫ ও নারী ভোটার ২৩ হাজার ৩৭৩ জন। এছাড়া উত্তর সিটির ৩টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন ৬ হাজার ৩২৫ জন। তিনটি কেন্দ্রে নারী ২ হাজার ৮৫২ ও পুরুষ ৩ হাজার ৪৩৭ জন ভোটার ভোট দেবেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভোট আর পূজা যেহেতু একই সময়ে সেহেতু আমরা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। যে সব কেন্দ্রেগুলোতে ভোট ও পূজা হবে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশি নিরাপত্তা জোরদার করতে বলব। এছাড়া প্রয়োজনে ভোট কক্ষগুলোতে প্যান্ডেল করে দেওয়া হবে। পূজার জন্য উপস্থিত মানুষও তাদের শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। এখানে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা না। কোথাও কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘পূজা অনুষ্ঠিত হওয়া যেকোনো কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। সমস্যা হওয়ার কথা আপাতত আমরা ভাবছি না। এছাড়া প্রয়োজনে কোথাও কোথাও অধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে।’
ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘কিছুটা নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে। যেহেতু ভোট ও পূজা একসঙ্গে হবে সেহেতু কেন্দ্র এলাকায় পূজায় আগতরা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবেন। সেজন্যই শঙ্কা। তবে আমরা সবাইকে শৃঙ্খলায় থাকতে অনুরোধ করব। এছাড়া অতিরিক্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোট কেন্দ্রের নিরপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।’
উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, ‘ভোট ও পূজা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় হয় সে জন্য আমরা বাড়তি নিরাপত্তা চাই। যাতে কোনটিতেই ব্যাঘাত না ঘটে।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া আমরা সকলের সাহায্য কামনা করি। পূজার কেন্দ্রেগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করার তাই করা হবে। এখনও পর্যন্ত আমরা কোন শঙ্কা দেখছি না।’
নির্বাচনী আচরনবিধি অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তিবর্গ, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং ভোটারদেরই প্রবেশাধিকার থাকবে। আর ভোটার স্লিপ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কোন ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ প্রদান করা যাবে না।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পূজার কারণে পূজার কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে করা রিট আবেদন খারিজের পর নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনার। বৈঠকে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা যে সব প্রতিষ্ঠানে ভোট ও পূজা এক সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে তার তালিকা দেন। বৈঠকে ১৫০টি ভোট কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা চান দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ প্রতিষ্ঠানের যে ৯৪টি কেন্দ্রে পূজা ও ভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে -
সরকারী কালাচাদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-৯), ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-৪), ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ (কেন্দ্র-৩), মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-৭), বনানী মডেল স্কুল (কেন্দ্র-৪), সরকারি তিতুমীর কলেজ (কেন্দ্র-৪), তেজগাঁও শিল্প এলাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৩), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক (কেন্দ্র-২), ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (কেন্দ্র-২), নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৬), ইস্পাহানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (কেন্দ্র-৫), সরকারি বিজ্ঞান কলেজ (কেন্দ্র-২), তেজগাঁও মহিলা কলেজ (কেন্দ্র-১), বটমুলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৫), তেজগাঁও ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-২), তেজগাঁও কলেজ (কেন্দ্র-৬), গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১), সরকারি সংগীত কলেজ (কেন্দ্র-২), লায়ন্স অগ্রগতি শিক্ষা নিকেতন (হাইস্কুল) (কেন্দ্র-১), লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), লালমাটিয়া মহিলা কলেজ (কেন্দ্র-৩), মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ (কেন্দ্র-৪) এবং গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউট (কেন্দ্র-২)।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৫ প্রতিষ্ঠানের যে ৫৬টি কেন্দ্রে পূজা ও ভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে-
রাজারবাগ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), লিটল বার্ড কিন্ডারগার্টেন (কেন্দ্র-১), ঢাকা কলেজ (কেন্দ্র-৪), গভ: ল্যাবরেটরি হাইস্কুল (কেন্দ্র-২), আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ (কেন্দ্র-৩), পোগোজ স্কুল (কেন্দ্র-২), ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউট (কেন্দ্র-১), বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (কেন্দ্র-২), বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-২), সিলভার ডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুল (কেন্দ্র-২), শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (কেন্দ্র-২), সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ (কেন্দ্র-২), সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), সবুজ বিদ্যাপিঠ উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৩), কবি নজরুল সরকারি কলেজ (কেন্দ্র-২), ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১), সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ (কেন্দ্র-১), কে এল জুবিলী হাইস্কুল (কেন্দ্র-৪), গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), বাংলা ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১) এবং ধার্মিকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১)।